প্রতিটি মানুষের ঘর আলোকিত হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদ্যুতের জন্য মানুষের হাহাকার ছিল। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলাম। আমাদের লক্ষ্য-কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না। ওয়াদা করেছিলাম, প্রতিটি মানুষের ঘর আলোকিত হবে, আজ সেটা হয়েছে। আলোর পথে যাত্রা সফল হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (২১ মার্চ) পটুয়াখালীতে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, '১৩ বছরে গণতান্ত্রিক যাত্রা অব্যাহত আছে, ঝড়ঝাপটা যে আসেনি, তা কিন্তু নয়। সেগুলো আমরা মোকাবিলা করেছি।'
সরকার প্রধান বলেন, '২০০৯ সালে সরকার গঠন করে আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি মাত্র ৩ হাজার ২৬৭ মেগাওয়াট। বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। ১৩ বছরে ৩০ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৫৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছি।'
তিনি বলেন, 'আলোর পথে, উন্নয়ন-সমৃদ্ধির পথে আমাদের এই যাত্রা কেউ দমাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা অর্জনের অনেক পূর্বেই এ অঞ্চলে বিদ্যুতায়নের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বন্ধ শিল্প কারখানাগুলো চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এখন পর্যন্ত স্থাপিত দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১৩তম আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে আমরা আলো জ্বালতে পারলাম এটাই হচ্ছে সবচেযে বড় কথা। আমরা আলোকিত করেছি এদেশের মানুষের প্রত্যেকটা ঘর।
দুর্গম এলাকাতেও বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি আমরা সোলার প্যানেল করছি। যে সমস্ত এলাকা দ্বীপাঞ্চল- ইতোমধ্যে আমরা রাঙাবালি, নিঝুম দ্বীপ, সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীর নিচ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল করে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। আর যেখানে গ্রিড লাইন নাই সেখানে আমরা সোলার প্যানেল করে দিচ্ছি। আমাদের পাহাড়ী অঞ্চল, আমাদের হাওর-বাওর অঞ্চল, আমাদের দুর্গম এলাকা, প্রতিটি জায়গায় কিন্তু আমরা সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুৎ দিয়ে দিচ্ছি। অর্থাৎ কোনো ঘর অন্ধকারে থাকবে না। প্রতিটি মানুষের জীবন আলোকিত থাকবে। এটাইতো আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সকাল পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। করোনা মহামারি শুরুর পর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বাইরে দেশের অন্য কোথাও এটিই তার প্রথম সফর।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে কোম্পানীর পক্ষ থেকে অনুদানের চেক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি এবং পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি অডিও-ভিডিও উপস্থাপনাও প্রদর্শিত হয়।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেডের মহাপরিচালক (ডিজি) ইঞ্জিনিয়ার এ এম খুরশেদুল আলম।
কলাপাড়ার ধানখালীর পায়রাতে নির্মিত সর্বাধুনিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক এ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। পায়রায় কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর মধ্য দিয়ে ২০২০ সালেই বাংলাদেশ আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল ক্লাবে প্রবেশ করে ২০২০ সালেই। আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩তম দেশ। এশিয়ায় সপ্তম ও দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশ ছাড়া শুধু ভারতে এ ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় যৌথভাবে রয়েছে বাংলাদেশ ও চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল)। বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডাব্লিউপিজিসিএল) ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান অংশীদারে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এসএম/টিটি/জেডএকে