দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ২১ বছর এবং ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা সবসময় দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যায়, কিন্তু বাংলাদেশ সবসময় পিছিয়ে যাচ্ছিল। (৯৬ সালের আগে) ২১টি বছর এবং এরপরে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সময়ে যারা ক্ষমতায় ছিল, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কোনো আন্তরিকতাই তাদের ছিল না; এটাই হচ্ছে এদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য।’
সোমবার (২১ মার্চ) পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় দেশের বৃহত্তম পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকার গঠন করি। সেসময় বিদ্যুতের জন্য হাহাকার, সামান্য কিছু লোক বিদ্যুৎ পায়, গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎই ছিল না। আমরা উদ্যোগ নিলাম, শুধু সরকারি না, বেসরকারি খাতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করব। মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাব।
১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম, ৫ বছরের মধ্যেই আমরা ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হলাম। দুর্ভাগ্য আবার ২০০১ এ সরকার গঠন করতে পারিনি। ২০০৯ এ যখন সরকার গঠন করি তখন দেখলাম, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনে নেমে গেছে বিদ্যুৎ।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী ও বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারাও।
করোনা মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর পর এই প্রথম কোনো প্রকল্প উদ্বোধনে সরাসরি অংশ নিলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সকাল পৌনে ১১টার দিকে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টে এসে পৌঁছান তিনি।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্য দিয়ে দেশে শতভাগ দূষণমুক্ত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় এবং সারা বিশ্বে ১১তম দেশ।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ৬৬০ মেগাওয়াট ইউনিটটি ২০২০ সালের মে মাসে বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়, এটি ৪০০ কেভি পায়রা-গোপালগঞ্জ পাওয়ার ট্রান্সমিশন ব্যবহার করে এবং দ্বিতীয়টি গত বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরু করে।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, "২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনও দেশে মাত্র ৪৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত। মাত্র এক যুগের ব্যবধানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর সময় আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন শতভাগ বিদ্যুতায়ন। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’- এই মূলমন্ত্রে দুর্গম পাহাড় থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল- সব জায়গাতে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। দেশের দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন চরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। দুর্গম পাহাড়ে গ্রিড লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে সম্ভব হয়নি সেখানেও সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করেছি আমরা।’’
টিটি/