মুজিববর্ষে বড় অর্জন শতভাগ বিদ্যুৎ
মুজিব জন্ম শতবার্ষিকীতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন শতভাগ বিদ্যুৎ। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৯৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ হয়েছে। যা আসলে শতভাগই।
জানা যায়, ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৪৭ শতাংশ বিদ্যুতের সুবিধার আওতায় ছিল। এরপর গত এক যুগে বাকি ৫৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছে।
এই অবস্থায় সোমবার (২১ মার্চ) দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া এদিন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন তিনি।
শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এক মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা আসছে আগামীকাল ২১ মার্চ।
সেই সঙ্গে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে কার্যক্রম শুরু করা সর্ববৃহৎ মেগা প্রকল্প পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের এমনটা জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এখন পুরো দেশ বিদ্যুতের আওতায় চলে এসেছে। গ্রিড-অফগ্রিড মিলিয়ে দেশের সব এলাকাকে এখন শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আমরা আনতে পেরেছি।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে ৪ কোটি ২১ লাখের বেশি বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এর আওতায় জনগণের শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। এক যুগ আগে গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। গত এক যুগে গ্রাহক বেড়েছে ২ কোটি ১৩ লাখ। ২০০৯ সালে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল ২৭টি। বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪৬টি। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। এ ছাড়া আরও ১৩ হাজার ২১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। এ ছাড়া ভারত থেকে বর্তমানে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের মূল কাজটি করেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আইরি)। দেশে বর্তমানে ৪ কোটি ১৪ লাখ গ্রাহকের মধ্যে এককভাবে আরইবি’র গ্রাহকসংখ্যা ৩ কোটি ২৫ লাখ। ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আরইবি ২ কোটি ৫১ লাখ গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বর্তমান সরকারের ২০০৮ সালের রূপকল্পেই ছিল ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় আমরা গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৯৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ করেছি।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো। বঙ্গোপসাগরে ভেসে ওঠ বিচ্ছিন্ন চরগুলোতেও পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো।
মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ভোলার সাত উপজেলার চরাঞ্চলে ২০২০ সালে নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ যাওয়ার পর পাল্টে গেছে সেখানকার জীবনযাত্রা। এই চরগুলো হল ভোলা সদর উপজেলার চর চটকি মারা, মাঝের চর, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর, তজুমদ্দীন উপজেলার চর মোজাম্মেল, চর শাওন, চর নাসরিন, চর লাদেন, চর জহীর উদ্দিন, মলমচোরা, লালমোহন উপজেলার চর কচুয়াখালী ও চর শাহজালাল, চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরিমুকরি, মুজিবনগর ও শিকদার চর।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সাড়ে ৭ লাখ মানুষের ছোট দেশ ভুটান শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। আর দক্ষিণ এশিযার বড় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হলো।
এই অঞ্চলের অন্যতম শক্তিশালী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান নিজ নিজ দেশে এখনো শতভাগ বিদ্যুতায়ন করতে পারেনি।
আরইউ/এএস