সাধারণ কবরে শায়িত হলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ
সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে বনানীর বেসামরিক সাধারণ কবরস্থানে শায়িত করা হয়েছে। শনিবার (১৯ মার্চ) সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
গতকাল সাবেক এই প্রধান বিচারপতির মৃত্যুর খবর জানান, তার জামাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। রবিবার (২০ মার্চ) বেলা ১২ টা ১ মিনিটের দিকে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুর পর ওই দিনে তার প্রথম নামাজের জানাজা দুপুর ৫টার দিকে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় তার নিজ গ্রাম পেময়ীতে (পেমই) অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে মরদেহবাহী হেলিকপ্টারটি ফের ঢাকার উদ্দেশে আনা হয় এবং মরহুমের দ্বিতীয় জানাজার নামাজ রবিবার সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জানাজা শেষে সাহাবুদ্দীন আহমদের মরদেহ ১১টা ৩৫ মিনিটের দিকে বনানী কবরস্থানে আনা হয় এবং ১২ টা ১ মিনিটে বনানী বেসামরিক কবরস্থানে তার দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
বনানী কবরস্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক এ প্রধান বিচারপতিকে সাধারণ কবরেই দাফন করা হয়েছে।
সাহাবুদ্দীন আহমদের মেয়ে সিতারা পারভীন ও তার স্ত্রী আনোয়ারা আহমেদের কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ছোট ছেলে সোহেল আহমদ।
জানা যায়, সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তার তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় ছিলেন (মেয়ে) ড. সিতারা পারভীন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর ছিলেন। ২০০৫ সালের ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।
সাহাবুদ্দীনের এক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এবং আরেক মেয়ে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। আর দুই ছেলে বাবার সঙ্গেই থাকতেন। বড় ছেলে শিবলী আহমদ একজন পরিবেশ প্রকৌশলী। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ২০১৮ সালে ৮০ বছর বয়সে মারা যান সাহাবুদ্দীন আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা আহমদ।
জানতে চাইলে সাহাবুদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল আহমদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, স্বাভাবিক কবরস্থানেই আব্বুকে দাফন করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরবর্তীতে কথা বলে কবরস্থানের জায়গাটি আমরা (অস্থায়ীভাবে) কিনে নিবো।
প্রসঙ্গত, নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর বাংলাদেশের গণতন্ত্রে ফেরার প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী সাহাবুদ্দীন আহমদ পরে ১৯৯৬ সালে পুনরায় রাষ্ট্রপ্রধানের পদে ফিরেছিলেন। ২০০১ সালে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেওয়ার পর ঢাকার গুলশানের বাড়িতে অনেকটা নিভৃত জীবন-যাপন করছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বার্ধ্যক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছিলেন। মাসখানেক আগে তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।
বনানীর কবরস্থানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলি: সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কবরের পাশে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। শনিবার (১৯ মার্চ) সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
রবিবার (২০ মার্চ) বেলা ১২ টা ১ মিনিটের দিকে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। দাফন কার্যক্রম শেষে তার কবরস্থানে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়েছে।
এসময় তার কবরের পাশে রাষ্ট্রপতির পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়। তাছাড়া শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান, বর্তমান প্রধান বিচারপতি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ অ্যাটর্নি জেনারেল, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুর ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, নব্বইয়ের ডাকসু ঐক্য প্রভৃতি সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের পক্ষে এ শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়।
কেএম/