সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আর নেই
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ (৯২) ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন আবস্থায় মারা গেছেন। এর আগে (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিসিএইউতে) তাকে ভর্তি করা হয়। শনিবার (১৯ মার্চ) সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি। একজন প্রখ্যাত আইনবিদ ও ৬ষ্ঠ প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় জন্ম নেয়া সাহাবুদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়ার আগেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাহাবুদ্দীন আহমদ তার কর্মজীবনে প্রথমে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ম্যাজিস্ট্রেট, মহকুমা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালের জুন মাসে তাকে বিচার বিভাগে বদলি করা হয়। তিনি ঢাকা ও বরিশালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি তাঁকে বাংলাদেশ হাইকোর্টের বিচারক পদে উন্নীত করা হয়।
১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সাহাবুদ্দীন আহমদকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ করা হয়। বিচারপতি হিসেবে তার দেওয়া বহুসংখ্যক রায় প্রশংসিত। বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর ওপর তার দেওয়া রায় দেশের শাসনতান্ত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক অনন্য ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত।
১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। তৎকালীন সরকার তার সেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। ১৯৭৮ সালের আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি সাহাবুদ্দীন আহমদকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর এরশাদবিরোধী গণ-আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি মওদুদ আহমদ পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা হয়। ওইদিনই রাষ্ট্রপতি এরশাদ পদত্যাগ করে উপরাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ফলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি সরকার প্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার নেতৃত্বে দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়, যা দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা পায়।
সাহাবুদ্দীন আহমদের চাহিদা অনুসারে দেশের সংবিধানের এগারোতম সংশোধনী আনা হয়। ফলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পরও তিনি ১৯৯১ সালের ১০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে সুপ্রিম কোর্টে ফিরে যান এবং ১৯৯৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেন।
সাহাবুদ্দীন আহমদ আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেন ১৯৯৬ সালে। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ওই বছর ক্ষমতায় এসে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে। ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর তিনি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর নেন।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানিত পদে দায়িত্ব পালন করা মানুষটি দীর্ঘদিন ধরেই লোকচক্ষুর আড়ালে আছেন। ছোট ছেলে, ছেলেবউ, নাতি আর ব্যক্তিগত সহকারী ছাড়া তিনি কারও সঙ্গে দেখা করতেন না। গুলশানে নিজের ফ্ল্যাটেই নিভৃতে যাপন করেছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
এমএ/এসএ/