হারিছ চৌধুরীর মেয়ের চিঠিতে ডিএনএ টেস্ট হবে না: ডিবি প্রধান
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব প্রয়াত হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে যে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে, তা তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। প্রয়োজনে হারিছ চৌধুরীর মরদেহের ডিএনএ টেস্ট করা হবে বলে জানিয়েছে ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তবে ডিএনএ টেস্ট হারিছ চৌধুরীর মেয়ের চিঠিতে নয় আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী হবে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) রাতে ঢাকাপ্রকাশ-কে এ কথা বলেন ডিবি প্রধান।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, হারিছ চৌধুরী আসামি ছিলেন। তার লাশ কেন গোপনে দাফন করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে আদালতের নির্দেশনা নিয়ে তার মরদেহের ডিএনএ টেস্ট করা হবে।
ডিবি প্রধান বলেন, আমরা ইতিমধ্যে এটা নিয়ে কাজ করছি। মরদেহ ডিজেন্টার (মরদেহ উঠিয়ে নমুনা সংগ্রহ) করলে বা ডিএনএ টেস্ট করলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। তদন্ত চলছে এ বিষয়ে তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
মরদেহ কবর থেকে তুলে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন জানিয়েছেন হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, চিঠির বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। আমরা জেনেছি তার মেয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
তিনি বলেন, হারিছের মেয়ের সামিরার কথায় বা চিঠিতে লাশ উত্তোলন বা মরদেহের ডিএনএ টেস্ট করা হবে বিষয়টি এমন না। আমরা আমাদের গতিতে কাজ করছি।
চিঠিতে যা বলছেন হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা চৌধুরী-
‘হারিছ চৌধুরীর আসল পরিচয়ের বিষয়টি পরিবারের পাশাপাশি বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাংলাদেশের আইন বিভাগ যদি ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা পিতার পরিচয় নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।’
একইসঙ্গে হারিছের দেহাবশেষ সিলেটের দর্পণনগর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করার অনুরোধও জানান সামিরা। একই আবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিব এবং সিআইডি প্রধানের কাছে পাঠিয়েছেন হারিছ চৌধুরীর মেয়ে।
যেভাবে মারা গেলেন বিএনপির এই নেতা-
হারিছ চৌধুরীর স্বজনরা বলছেন, হারিছ চৌধুরীই তার নাম-পরিচয় গোপন করে মাহমুদুর রহমান সেজেছেন। ওই পরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করেন। ইন্টারপোলের রেড নোটিশধারী হারিছ সব গোয়েন্দার চোখে ধুলো দিয়ে প্রায় ১১ বছর ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।
গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর হারিছ চৌধুরী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান। পরদিন মাহমুদুর রহমান পরিচয়ে হারিছকে ঢাকার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের জালালাবাদের কমলাপুর এলাকায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসার কবরস্থানে দাফন করা হয় বলেও জানা গেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পর থেকে হঠাৎ লাপাত্তা হয়ে যান হারিছ-
বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ক্ষমতাকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী। অভিযোগ আছে, দায়িত্ব অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বসলেও তার প্রভাব বিস্তারের উৎস ছিল আলোচিত ‘হাওয়া ভবন’কে ঘিরে। তবে দাপুটে হারিছ চৌধুরী ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার গঠনের পর থেকে হঠাৎ লাপাত্তা হয়ে যান। এক যুগেরও বেশি সময় পার হয়েছে অথচ এক সময়ের দাপুটে হারিছ চৌধুরী কোথায় আছেন, জীবিত না মৃত তাও কেউ জানতেন না। অনেক নেতার গুম-নিখোঁজ ইস্যুতে দলীয় কর্মসূচি বা বক্তৃতা বিবৃতি থাকলেও হারিছ চৌধুরীর কথা কাউকে মুখে নিতেও দেখা যায় না।
একুশে গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর-
দেশজুড়ে আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটাবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীর সাত বছরের জেল ও দশ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে। এই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও সাজা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১১ সালের আগস্টে তেজগাঁও থানায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অজ্ঞাত সূত্র থেকে টাকা সংগ্রহের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার সঙ্গে হারিছ চৌধুরীসহ আরও তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
এদিকে গত বছরের ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার এক মামলায় হারিছ চৌধুরী, সিলেটের মেয়রসহ ২৮ জনের জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
কেএম/টিটি