গুমের শিকার ব্যক্তিদের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নয়: জাতিসংঘ
জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে সক্রিয়তা ও সহযোগিতার কারণে বলপূর্বক অন্তর্ধানের শিকার ব্যক্তিদের আত্মীয় ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড দ্রুত বন্ধের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে, ১০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক র্যাবের অফিসারদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বলপূর্বক অন্তর্ধানের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য, মানবাধিকার কর্মী এবং নাগরিক সমাজের কর্মীদের উপর বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ হুমকি, চাপ প্রয়োগ ও হয়রানী শুরু করেছে।’
ডিসেম্বর ২০২১ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২২ এর মধ্যে বলপূর্বক অন্তর্ধানের শিকার কমপক্ষে ১০টি পরিবারের বাসস্থানে গভীর রাতে অভিযান চলেছে বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘অভিযানে পরিবারের সদস্যদেরকে হুমকি ও ভয় দেখানো হয় এবং হয় সাদা কাগজে তাদেরকে সই করতে অথবা আগে থেকেই লিখে রাখা বিবরণে, যেখানে উল্লেখ আছে যে তাদের পরিবারের সদস্য বলপূর্বক অন্তর্ধানের শিকার হয় নি বরং তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছে, সই করতে বাধ্য করা হয়। এটি অগ্রহণযোগ্য।’
পরিবার, মানবাধিকারকর্মী আর নাগরিক সমাজের উপর ক্রমবর্ধমান প্রতিকূল অবস্থান বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি অফিসার কর্তৃক কিছু সামাজিক সংগঠনের বিরুদ্ধে বারংবার জাতিসংঘের নিকট ‘মিথ্যা তথ্য’ দেওয়ার দোষারোপ নাগরিক সমাজের মূল কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন, ‘আত্মীয় ও মানবাধিকারকর্মীরা যাতে তাদের বৈধ কাজগুলি নিরাপদ ও উৎসাহব্যঞ্জক পরিবেশে কোনো হুমকি, চাপ বা প্রতিহিংসার ভয় ছাড়া করে যেতে পারে বাংলাদেশকে অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রকাশিত প্রতিশোধমূলক কাজগুলো অন্যদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে পারে যা মানবাধিকারসহ জনস্বার্থ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বা জাতিসংঘের বা এর প্রতিনিধির সঙ্গে সহযোগিতা করতে তাদেরকে বিরত রাখতে পারে।’
২০০৯ সাল থেকে বেশিরভাগ বলপূর্বক অন্তর্ধানের ঘটনা সংঘটনের সঙ্গে র্যাবের জড়িত থাকার বিষয়ে খবর হয়েছে; যা জাতিসংঘের বলপূর্বক অথবা অনিচ্ছুক অন্তর্ধান বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও উল্লেখ আছে।
আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এই সকল গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগসমূহের ব্যাপারে, অন্তর্ধানের শিকার ব্যক্তিদে্র পুঙ্খানুপুঙ্খ ও বিশদ অনুসন্ধানসহ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বিস্তারিত তদন্ত করার জন্য দায়বদ্ধ। একই সঙ্গে র্যাব এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাকেও যাচাই করা ও ফৌজদারি দায় থেকে রেহাই দেওয়া উচিৎ নয়। বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারকে সত্য, ন্যয়বিচার, ক্ষতিপূরণ এবং পুনরাবৃত্তি না হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়ার এবং তাঁদের অধিকার সংরক্ষণ ও বজায় রাখার জন্যেও বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।
আরইউ/এমএমএ/