ধর্ষনের বিচারে অভিযোগকারীর নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না
সাক্ষ্যপ্রমাণ আইনে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ বিচারের ক্ষেত্রে অভিযোগকারী নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং দুশ্চরিত্র প্রমাণের যে আইনি সুযোগ এতদিন ছিল, সে সংক্রান্ত দুটি ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সোমবার এ বিষয়ক আইন এভিডেন্স অ্যাক্ট ২০২২-এর সংশোধনীর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের সভাকক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট-২০২২-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।’
তিনি বলেন, ‘গত কোভিডের পর থেকে অনলাইনে মামলা-মোকদ্দমা চলছিল। এর ফলে সাক্ষী-প্রমাণ সব অনলাইনেই আসছিল, কিন্তু আমাদের এভিডেন্স অ্যাক্টে ডিজিটাল এভিডেন্স সরাসরি কোনো বিধান ছিল না। কেউ যদি মামলায় হেরে যেত, সে যদি আবার আপিল করে উপরের কোর্টে, সে ক্ষেত্রে আইনি কিছু জটিলতা হওয়ার সুযোগ ছিল।
‘এটা অনেকদিন ধরেই আলোচনায় ছিল, এ জন্য আইন মন্ত্রণালয় এই আইনটি নিয়ে এসেছে। এখন থেকে ডিজিটাল যে এভিডেন্স, সেগুলোও গ্রহণ করা হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কেউ যাতে ফলস বা ম্যানিপুলেটেড এভিডেন্স আদালতে পুটআপ (ভুয়া বা কারসাজি করা তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন) করতে না পারে, এ জন্য প্রয়োজনবোধে কোর্ট যদি মনে করে আপত্তিজনক কিছু আছে বা কেউ আপত্তি করলে ওই সাক্ষ্য-প্রমাণ ফরেনসিক করা যাবে। এটা করলে বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘কেউ একটা ম্যানিপুলেটেড এভিডেন্স দিল, এটা কিন্তু বাঁচার কোনো উপায় নাই। কারণ ফরেনসিক করলেই ধরা পড়ে যাবে। বিশেষ করে ডকুমেন্টের ফরেনসিক কিন্তু দুই-চার মিনিটেই করা যায়।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘একটু সময় লাগে ভিডিওর ক্ষেত্রে, তাও খুব বেশি সময় লাগে না। আমাদের পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি আছে দেশে। বিসিসির কাছেও খুব হাই টেকনোলজি আছে। এগুলো বিভিন্ন জায়গায় সরকার সুবিধামতো ছড়িয়ে দিয়ে যে ডিজিটাল সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে, সেগুলো যদি কোর্ট বা কোনো পক্ষ মনে করে আপত্তি আছে, তাহলে ফরেনসিক করে নেবে।’
তিনি বলেন, ‘সুতরাং টুইস্ট করার কোনো উপায় নেই। কেউ যদি টুইস্ট করে তাহলে আমাদের প্যানাল কোডের (দণ্ডবিধি) ২১১ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্যের বিষয় আছে, আর ডিজিটাল অ্যাক্টেরও ৫৭ ধারা আছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ‘এটা নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটা খুব ট্রিকি জিনিস। এ জন্য ক্যাবিনেট বলেছে, আবারও আমাদের কাছে নিয়ে আসুক, আমরা দেখে দেব।’
তিনি বলেন, ‘১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের দুটি ধারায় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলায় বাদীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার যে সুযোগ রয়েছে, সংশোধনে সেখানেও পরিবর্তন আসছে।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটি বিষয় হলো ভিকটিমকে ক্রস (জেরা) করার ক্ষেত্রে আরেকটু শালীনতা বজায় রাখতে হবে। কোন জাতীয় প্রশ্ন প্রয়োজন, সেটা কোর্ট ঠিক করে দেবে।’
এনএইচবি/এমএমএ/