কমবে আমদানি ব্যয়, বাড়বে কর্মসংস্থান
দেশেই উৎপাদন হতে যাচ্ছে রেল ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ
রেলের লোকোমোটিভ ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। এ খাতে ব্যয় কমাতে এবং দেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যবহার্য অন্তত ৫০ শতাংশ যন্ত্রাংশ দেশেই তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার।
লোকোমোটিভ ইঞ্জিন যন্ত্রাংশ উৎপাদনের উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি একটি খসড়া নীতিমালা চলতি মাসেই চূড়ান্ত হতে পারে বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হলে রেলওয়ের বার্ষিক ৭৫ থেকে ১৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এ ছাড়াও দেশের আমদানিকৃত যন্ত্রাংশের উপর নির্ভরতা অনেকটাই কমবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে ইঞ্জিনের জন্য প্রায় ২৫ হাজার বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয়। বিশেষায়িত যন্ত্রাংশের মধ্যে এখন মাত্র ৫ শতাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়। বাকি ৯৫ শতাংশ বিদেশি নির্মাতাদের কাছ থেকে কেনা হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের ২৮৩টি লোকোমোটিভের ৬১ শতাংশই ২০ বছরের আয়ুষ্কালে পৌঁছে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনগুলো চালু রাখতে প্রতি বছর প্রায় ১৫০-২০০ কোটি টাকার ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশেই বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে।
যেহেতু বেশিরভাগ ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়, সে ক্ষেত্রে কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে খুচরা যন্ত্রাংশ সহজে পাওয়া যায় না। সেই যন্ত্রাংশ আমদানি করতেও অপেক্ষা করতে হয়। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না পাওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে ইঞ্জিন মেরামত করা সম্ভব হয় না বলে ব্যাখ্যা করেন ওই কর্মকর্তা।
ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ দেশে তৈরি হলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি সময়ও বাঁচবে। এ ছাড়া সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানও।
উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি রয়েছে ওই খসড়া নীতিতে। বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব ওয়ার্কশপগুলো এ উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, নীতিমালাটি বাস্তবায়িত হলে যন্ত্রাংশ সহজে ও সস্তায় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া এটি স্থানীয় শিল্পের বিকাশেও ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অন্যান্য সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত নীতির লক্ষ্য দেশে লোকোমোটিভ যন্ত্রাংশের দ্রুত উৎপাদন ও সহজলভ্যতা।
এতে বলা হয়েছে, বহরে ইঞ্জিন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত প্রচুর খুচরা যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয়। ডিজেল ইঞ্জিনের অংশগুলো নম্বর ও বিবরণের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশের আমদানি ব্যয় কমাতে বিসিক নীতিমালার অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ের যান্ত্রিক শাখার নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় নির্মাতাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং অস্থায়ীভাবে যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়েছিল।
তবে যথাযথ তত্ত্বাবধানে নীতি ও নির্দেশনার অভাব এবং উদ্যোক্তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সুরক্ষার অভাবের কারণে টেকসই উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হননি। ফলে পণ্যের প্রত্যাশিত মান বজায় রাখা সম্ভব হয়নি।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিসিক বা সমমানের সনদধারী যেসব নির্মাতার নিজস্ব কারখানা, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনবল ও আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে, তারা যন্ত্রাংশ উৎপাদনের জন্য যোগ্য হবেন।
একজন যোগ্য উদ্যোক্তা বা সংস্থা সঠিকভাবে চুক্তি সম্পন্ন করলে রেলওয়ে প্রাথমিকভাবে এটিকে পাঁচ বছরের জন্য একক উৎস হিসেবে ঘোষণা করবে। দ্য রেলওয়েস ডকুমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট কমিটি, ফ্যাক্টরি ইন্সপেকশন কমিটি, কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও প্রাইসিং কমিটি এ বিষয়গুলো তদারকি করবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী বলেন, ‘চলতি মাসের মধ্যেই দিনাজপুরের পার্বতীপুরে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় অংশীদারদের নিয়ে খুচরা যন্ত্রাংশের প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন নীতিমালা বিষয়ে একটি সেমিনার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি মাসের কোনো একদিন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন।’
সেমিনারে বুয়েট এবং বিট্যাকের (বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স সেন্টার) বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি ও বিনিয়োগকারীরা উপস্থিত থাকবেন। সেমিনারে আলোচনার পর খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
টিটি/এসএ/