ভালো নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা চান শিক্ষকরা
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা চান শিক্ষকরা। তাদের এই দাবির সঙ্গে একমত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, আমরাও আপনাদের সঙ্গে পুরোপুরি একমত, সমঝোতা লাগবে। ভালো ইলেকশন করাটা পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের উপর নির্ভর করে না। স্টেকহোল্ডার যারা আছেন, তারাও যদি সমভাবে না আসে...পলিটিক্যাল ক্লাইমেট, নির্বাচনে রাজনৈতিক আবহ অনুকূল না হয়, দলগুলোর মধ্যে মোটামুটি সমঝোতা না থাকে; পক্ষগুলো বিবদমান হয়ে যায়, তাহলে আমাদের পক্ষে ভালোভাবে নির্বাচন করাটা দুরূহ।
রবিবার (১৩ মার্চ) বিকালে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সংলাপে সিইসি এসব কথা বলেন। সংলাপে মতামত এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা করতে হবে। নির্বাচন ভবনে বিকাল ৩টা থেকে দুই ঘণ্টাব্যাপী এই সংলাপে অংশ নেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম মফিজুল ইসলাম, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচারর্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম আবুল কাশেম মজুমদার, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, ড. আখতার হোসেন, অধ্যাপক লায়লুফার ইয়াসমীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার। চার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, আনিছুর রহমান, রাশেদা সুলতানা এমিলি ও আহসান হাবীব খানও সংলাপে ছিলেন।
সিইসি বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা যদি থাকে তারা (রাজনৈতিক নেতারা) যদি বার বার বসতে পারেন। যদি আমাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন আমাদের সুন্দরভাবে কাজ করতে সহজ হয়। তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী কারণ তারা পলিটিক্স নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে আমাদের সদিচ্ছার অভাব থাকবে না।
তিনি বলেন, ভালো নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতাটা গুরুত্বপূর্ণ। সমঝোতা হলে ইসিবর কাজ সহজ হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির কোনো ইতিবাচক বক্তব্য না আসার প্রেক্ষাপটে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “কিছু কিছু রাজনৈতিক দলকে দেখছি, তারা কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনকে আস্থায় নিচ্ছে না এবং নির্বাচনে আসবেন না। যদি এটাই হয় কোন বড় দলের অবস্থান আর যদি তারা নির্বাচন থেকে দূরে থাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমার সহকর্মীরাও মনে করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা যেটা এসেছে, ‘ইনক্লুসিভ এবং পার্টিসিপেশন যদি না থাকে সেখানে যদি ঘাটতি থাকে তাহলে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা ভাটা পড়ে যেতে পারে। তবে আমরা চেস্টা করবে ওই জিনিসটা কিভাবে মোকাবিলা করা যায়। সংলাপ করতেই হবে। এজন্য তিনি শিক্ষকদেরও লেখালেখি করার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন যদি আপনারা পত্রিকাগুলোতে আটিকেল লেখেন বা টিভি টক শোতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে উদ্ভুদ্ধ করেন তাহলে আমাদের কাজটা সহজ হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পোস্টাল ব্যালটে ভোট গ্রহণের বিষয়ে ইসিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমাদের আরপিও তে পোস্টাল ব্যালটের কথা বলা আছে কিন্তু সেভাবে বাস্তবায়ন হয় না। এজন্য আপনাদের ভেবে দেখতে হবে। আমাদের কত লাখ লোক দেশের বাইরে আছে, আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শান্তিরক্ষা মিশনে আছে তাদের সহজে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে যে অগণতান্ত্রিক বিধি-বিধান রয়ে গেছে তাতে ক্রমণ যেন জেকে বসছে। মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে অকেজো করে দিচ্ছে। এসব বিষয়ে আপনাদের ভাবতে হবে।
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক করার ব্যাপারে শিক্ষকরা খুব জোর দিয়েছেন। এটাকে প্রাতিষ্ঠানিক করতে হলে ‘ইনক্লুসিভ’ করতে হবে। সবাইকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। সবাইকে যদি অংশগ্রহণ করতে হয় সবাইকে নির্বাচনে আসতে হবে। আপতত এই মুহুর্তে সেটা দেখছি না। সবাই আসছেন না, সে ধরণের একটা আভাস পেয়েছি। সবাইকে আনার জন্য সমঝোতার ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়েছে সকলেই। নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে আমরা যেন সবাই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে বলি যে আপনারা সমঝোতা করার চেষ্টা করেন। দেশটাকে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রে রূপ দিতে হলে ইনক্লুসিভ ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ।
ড. সাদেকা হালিম বলেন, আজকের আলোচনায় আমরাই কথা বলেছি তারা (ইসি) একদমই শান্ত ছিলেন। আলোচনায় আসছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যেটি হবে সেটির স্বচ্ছতা যেন থাকে, জবাবদিহিতামূলক হয়, অংশগ্রহণমূলক হয় আমরা এই কথাগুলো বলেছি। আমরা বলেছি নির্বাচনে যেন সহিংসতা না হয়, যদি সহিংসতার শিকার কেউ হয় তাকে কিভাবে রক্ষা করতে পারি সে বিষয়ে কথা বলেছি। সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের কথা বলেছি। তারা আশস্থ করেছেন নারীর অংশগ্রহণ বাড়াবেন।
তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন গঠন হওয়ার পর থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে ‘বিগ নো’ আসছে। এই না কে হ্যাঁ করাতে হবে। আপনারা (ইসি) দাওয়াত দিতেই থাকবেন দিতেই থাকবেন। সমঝোতায় আনতে হবে।
অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ফ্রি ফেয়ার এবং ইমপারসিয়াল নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আপনারা স্বচ্ছতা বজায় রাখবেন। ইমপারসিয়াল প্রশাসন সৃষ্টি করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে কোড অব কন্ডাক্ট মেনে চলতে হবে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বলেন, আপনারা (সিইসি ও ইসি) যে প্রক্রিয়ায় এসেছেন সেটা আমার কাছে ভাল লাগেনি। এটাকে গণতান্ত্রিকও বলব না। আপনারা সরকারের সুবিধাভোগী। আপনাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বলতে পারি। আপনাদের নিয়োগ দুর্বিসন্ধিমূলক। আপনারা সরকারের বেতন ভুক্ত কর্মচারী ছিলেন। আপনারা কি পারবেন? একটা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে?
তিনি বলেন, আগের কমিশনগুলোও সংলাপের এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিল। সেখানে অনেক পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, সেই পরামর্শগুলো আমলে নেওয়া হয়নি। আজকে আমাদের পরামর্শ যে আপনার আমলে নেবেন, সেটা আমরা কিভাবে বিশ্বাস করব?
তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর সিইসি সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন, যেটা ফ্যানটাসটিক। কিন্তু কার সাথে সমঝোতা? কিসের সমঝোতা। আামার আপনার সাথে সমঝোতনা না। এখানে সরকারি দল, বিরোধী দল এদের মধ্যে সমঝোতা হবে। এই সমঝোতা যদি কার্যকর করা যায় ভালো। আর যদি সমঝোতার প্রস্তাব উপেক্ষিত হয় তাহলে আপনাদের পক্ষে বড়ই কঠিন হবে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা টাফ হয়ে যাবে। দলীয় সরকারের অধীনে স্বচ্ছ নির্বাচন অনেক টাফ। আমার পরামর্শ সাড়ে ৩০০ আসনের একটিতেও ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না।
অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান বলেন, বর্তমান কমিশনের উপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। আপনাদের রোবর্ট হতে হবে। অনেক সমালোচনা আসবে ওসব কথায় কান দেওয়া যাবে না। অনেক তথ্য প্রকাশ করতে হবে।
এসএম/