যেখানেই মজুদদারি সেখানেই হস্তক্ষেপ: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সুযোগ নিয়ে কোনো অসাধুতা যেন প্রশ্রয় না পায় সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। প্রত্যেক জায়গায় আমরা দুই এক দিনের মধ্যে একটা টাস্কফোর্স গঠন করব। যেন কেউ সুযোগটা না নিতে পারে। সরকার কিন্তু অত্যন্ত পজিটিভলি কনসিডার করছে যে, প্রাইস কোনটা হওয়া উচিত। এর উপরে যাওয়ার চেষ্টা যারা করছেন তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমরা অ্যাকশনে যাব। এটা বলতে পারি।'
রবিবার (১৩ মার্চ) নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, পণ্যের মজুদ পরিস্থিতি, সরবরাহসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে জরুরি বৈঠকে বসেন সরকারের স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ, বর্ডার গার্ডের মহাপরিচালকসহ সরকারের বেশ কয়েকজন সিনিয়র সচিব, সচিব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সামনে ব্রিফিং করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী।
টিপু মুনশি বলেন, এটা সত্য কথা যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে যে, আমরা কোথাও স্টক করতে দেব না, মজুদদারি করতে দেব না। এ ব্যাপারে আজকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেখানে যেখানে এই প্রচেষ্টা করা হবে সেখানে সেখানে আমরা হস্তক্ষেপ করব। এমন না যে আজকে দাম বাড়ার কারণে তারা দাম বাড়িয়েছে। আসলে তারা আগের হিসাব ধরে চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, কিভাবে মানুষেকে সাশ্রয়ীমূল্যে পণ্য দেওয়া যায় সে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়ে কথা হয়েছে। একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা আশা করছি, কালকের মধ্যেই এ ব্যাপারে একটা নির্দেশনা দিতে পারব। এসআরও হয়ে যাবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, নিত্যপণ্যের যে সাপ্লাই চেইন সেটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করব। যাতে নিত্যপণ্যের বা প্রয়োজনীয় পণ্যের সাপ্লাই যেন ঠিক থাকে।
পণ্যের মজুদটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করব, যেখানেই রাখেন না কেন। কেউ যেন স্টক বা মজুদ বেশি রেখে দ্রব্যমূল্য বাড়াতে না পারে।
তিনি বলেন, সারাবিশ্বে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। এই দাম বাড়ার কোনো মাত্রা নেই। আমরা প্রতিদিনই দেখছি দাম বাড়ছে। তার প্রভাব কিন্তু আমাদের দেশে পড়ছে। এর পাশাপাশি রোজার মধ্যে অন্যান্য জিনিসেরও দাম বাড়তে পারে এটাকে মাথায় রেখে আমরা আজকে বসেছিলাম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেল নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আপনাদের একটা পরিসংখ্যান দিতে চাই। এক বছর আগেও সয়াবিন তেলের দাম ছিল প্রতি টন ১২৩৫ ডলার। পামওয়েল ছিল এক হাজার ২৯ ডলার প্রতি টন।
এক বছর পর ৯ মার্চের তথ্য অনুযায়ী সয়াবিন তেল প্রতি টনের দাম ১২৩৫ ডলার থেকে ১৯৩০ ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। আর পামওয়েল ১০২৯ ডলার থেকে বেড়ে ১৮৯৭ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এই যে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, এর চাপটা থাকছে। যেহেতু তেল আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। আমরা পুরোটাই আমদানি নির্ভর, কাজেই এই সিচুয়েশনটা কি হতে পারে আপনারা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করছেন। এই তেলের দাম সহনীয় পর্যায় রাখার জন্য, আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য আজকে আমরা মিটিং করেছি।
তিনি বলেন, এজন্য আমরা সাপ্লাই সোর্স, স্টক সোর্স এবং যে কোনো উপায়ে দাম যেন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি না হয় সেদিকে নজর রাখব। এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের গমের সরবরাহ ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আসত। সেখানেও আমরা একটা অসুবিধায় পড়তে পারি। দাম বাড়তে পারে। এটা কিভাবে নিয়ন্ত্রণে করতে পারব, কিভাবে সহনীয় পর্যায় রাখতে পারব, এ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, রোজাকে সামনে রেখে খোলা বাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রির পরিমান বৃদ্ধি করার। যাতে করে ন্যায্যমূল্যে বা স্বল্প মূল্যের এসব দ্রব্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি।
তিনি বলেন, রোজায় অতিরিক্ত চাহিদার কথা বিবেচনা করে তড়িৎ আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের উপর অর্থাৎ ভোজ্যতেল কিংবা চিনি সেগুলোর উপরে ভ্যাট-ট্যাক্স কতটা কমানো যায় সে বিষয়ে আমরা শিগগিরই জানাব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্বের পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আন্তর্জাতিক ক্রয়ের ক্ষেত্রে সবাইকে উৎসাহিত করব যেন তারা এসমস্ত পণ্য আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল রাখেন।
তিনি আরও জানান, রোজার সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ যেন কম না হয় সে জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কারণ আমাদের ডিজেল ও এলএনজি গ্যাসের সরবরাহ কমতে পারে। এ জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে করে আমাদের বিদ্যুৎ ঘাটতি না হয়।
আগে আমদানি করা সয়াবিন তেল এখন বেশি দামে কেন বিক্রি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আপনারা জানেন কি প্রক্রিয়ায় ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ হয়। এক মাস চলে যাওয়ার পর কি পরিমান দামে ভোজ্যতেল ল্যান্ড করল সেটার উপর নির্ভর করে ট্যারিফ কমিশনের সিস্টেম আছে, যে সিস্টেমে দাম নির্ধারণ করা হয়। আমরা গত ২ ফেব্রুয়ারি একটা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। সেটা আপনারা জানেন। সেটা করা হয়েছিল জানুয়ারি মাসের আমদানি মূল্যের উপর। আন্তর্জাতিক বাজারে আজকে যে দাম বাড়ছে সেটা যে আমাদের বাজারে প্রভাব ফেলবে তা কিন্তু নয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যেখানে দেড়শ ট্রাক ছিল সেখানে আমরা সাড়ে চারশ’ ট্রাক নিয়ে নেমেছি। পাশাপাশি আমরা রোজা সামনে রেখে এক কোটি পরিবারকে পণ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি। এটা তো এমন নয় যে, মেশিন চাপলেই চলে আসবে।
আমাদের আলোচনা হয়েছে, প্রয়োজনে আমরা আরও ব্যবস্থা নেব। যা করণীয় আরও করব।
সয়াবিন তেলের মজুদ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাণ্যিজ্যমন্ত্রী বলেন, যতটা থাকা দরকার ততোটাই আছে। কোনো ক্রাইসেস নেই।
এনএইচবি/আরএ/