হারিছ চৌধুরীর ডিএনএ টেস্টের পরিকল্পনায় পুলিশ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপির সাবেক নেতা আবুল হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু, কবরস্থান শনাক্ত ও লাশ উত্তোলনের বিষয় নিয়ে নানান গুঞ্জন চলছে। এ কারণে গোয়েন্দা সংস্থা হারিছের লাশ শনাক্ত করে উত্তোলন ও ময়না তদন্তের পরিকল্পনা করছেন।
আজ রবিবার (১৩ মার্চ) সিআইডির সদর দপ্তর, ঢাকা জেলা পুলিশ, ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশসহ বেশ কয়েকটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সিআইডি একটি তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে দাখিল করেছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, ওই প্রতিবেদন দাখিলের পর বলা হয় পুলিশের উপরের কর্মকর্তাদের অনুমতি পেলে বা আদালতের অনুমতি পেলে খুব তাড়াতাড়ি হারিছ চোধুরীর (‘মাহমুদুর রহমান’ পরিচয়কারীর) লাশ উত্তোলন করা হবে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে তার স্বজনদের সহযোগিতা পাননি। ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরে থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেনি পুলিশ। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে সাভারের করবস্থান থেকে লাশ তোলার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। অনুমতি পেলে লাশের ডিএনএ পরীক্ষা করাবে পুলিশ।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাভারের যে কবরস্থানে হারিস চৌধুরী বা যার লাশ আছে সেটা চিহ্নিত করতে এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। ওই লাশটি তোলা হতে পারে। এ বিষয় নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে।
যা বলছে সিআইডি
এ বিষয়ে সিআইডির ‘সিরিয়াস ক্রাইমের’ বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান খান বলেছেন, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত হতে আমরা কাজ করছি। তিনি মারা গেলে তার পরিবার ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিশ সরিয়ে ফেলার জন্য আবেদন করার কথা। কিন্তু সেটা তারা করেনি। তার সন্তানরা দেশের বাইরে থাকেন। সন্তানদের সঙ্গে তার কথা হয়নি। এখন পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।
সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান খান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, হারিছের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না হয়তো ফরেনসিক বিভাগ থেকে ভাল জানতে পারবেন। তবে এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ভাবে তদন্ত চলছে।
জানতে চাইলে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব এর পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, হারিছ চৌধুরীর লাশ সনাক্ত এবং উত্তোলনের বিষয়ে আমরা এখন ও কোন তথ্য পায়নি। এ বিষয়টি নিয়ে আপাতত আমি কিছুই বলতে পারছি না। পরে হয়তো ভালো ভাবে বলা যাবে।
ঢাকা জেলার সিআইডি পুলিশ সুপার বিজয় ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর বিষয়ে আমার কাছে তেমন কোনো তথ্য নাই। তবে হয়তো এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে পরে আপনাকে জানাতে পারবো।
পুলিশ যা বলছে
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে তার স্বজনদের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরে থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছে পুলিশ। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে সাভারের করবস্থান থেকে মরদেহ তোলার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। অনুমতি পেলে মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করাবে পুলিশ।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) এআইজি মহিউল ইসলাম বলেন, হারিছ চৌধুরীর বেঁচে থাকা বা মারা যাওয়ার ওপর ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিশ থাকা না থাকা নির্ভর করছে। সে জন্য সিআইডিকে তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছিল। দুই সপ্তাহ আগে সিআইডি একটি তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে দাখিল করেছেন।
তিনি বলেন, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। হারিছ চৌধুরী নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হচ্ছে। এখন আরও অধিকতর তদন্ত হবে। তদন্তে যদি মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিশ সরিয়ে ফেলা হবে। তারা এ বিষয়টি নিয়ে সিআইডি কাজ করছে।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর লাশ কোথায় আছে সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন করা হবে কিনা এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছিনা। তবে তার লাশ কোথায় দাফন হয়েছে এ বিষয়ে ও আমাদের ঢাকা জেলা পুলিশের কাছে তেমন কোন তথ্য নাই। যদি ঢাকা জেলায় তার লাশ হয়ে থাকে তাহলে পরে এসব বিষয়ে বলা যাবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্ন্ডযা পাবলিক রিলেশনস বিভাগ উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ উত্তোলন বা লাশ সনাক্ত এবং এসব বিষয়ে আমাদের মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে কোন তথ্য নাই। এ বিষয়ে আমরা এখন কিছু বলতে পারছি না।
অবিলম্বে সাভারে দাফন হওয়া মাহমুদুর রহমান পরিচয়ে হারিছ চৌধুরীর মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ টেস্ট করা হতে পারে। আদালতের নির্দেশনা পেলে দ্রুতই এ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র।
জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, শুনেছি তার লাশ সাভারে দাফন করা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নাই। আমরা ও খোঁজ খবর নিচ্ছি।
আমরা জানি এটা সাভার থানার মধ্যে পড়েছে তার মরদেহ কবে নাগাদ উত্তোলন করা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি লাশ উত্তোলন বা কোন কাজ করা হয় তাহলে আমরা থানা পুলিশ সময় বিশেষ হয়তো জানতে পারবো। এখন এ বিষয়ে এর থেকে কিছু বলতে পারছি না।
কেএম/