জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রশংসনীয়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে সারাদেশের মানুষ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। এর অংশ হিসেবে মা তার জঙ্গি সন্তানকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আজ জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের কর্মকতৎপরতার প্রশংসা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শিরোনামে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। শনিবার (১২ মার্চ) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে এটি প্রকাশ করা হয়। এ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
হেফাজতে ইসলামের দেশব্যাপী নাশকতা, বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা ও সংস্কারের উদ্যোগ, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিস্তার, গুলশান হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সফলতা, রোহিঙ্গা শিবিরে জঙ্গি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতা, ওয়াজের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিস্তারের ওপর এই শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়। শ্বেতপত্রে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস নির্মূলে তিন মেয়াদী সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ দফা আশু করণীয়, ২৩ দফা মধ্যমেয়াদী ও ৯ দফা দীর্ঘ মেয়াদী সুপারিশ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘জঙ্গিবাদ কোনো ধর্মের আদর্শ হতে পারে না। জঙ্গিরা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বেছে বেছে সংখ্যালঘু থেকে শুরু করে বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করেছে। আমরা অনেক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছি। আমাদের কার্যক্রম এখনও অব্যাহত আছে। যে বা যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করুক না কেন আমরা তাদের কাউকেই ছাড় দেব না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রী আরও বলেন, ‘শ্বেতপত্র প্রকাশনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, নির্মূল কমিটি যদি শ্বেতপত্র না করত তাহলে আমরা অন্ধকারেই থেকে যেতাম। শাহরিয়ার কবিরের উদ্যোগের জন্য আমরা দেশ-বিদেশ থেকে তার প্রশংসার কথা শুনতে পাই। এজন্য আমি তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন-এর সদস্য রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ-এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সমাজকর্মী কাজল দেবনাথ, নির্মূল কমিটির সহসভাপতি ও গণকমিশনের সদস্য শিক্ষাবিদ শহিদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, রিজিওনাল এন্টি টেররিস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এর নির্বাহী পরিচালক ও মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন-এর সদস্য মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার (অব.) এবং বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ-এর নির্বাহী পরিচালক সমাজকর্মী বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর।
এ ছাড়াও নির্মূল কমিটির নেতা-কর্মী, গণকমিশন সদস্যবৃন্দ এবং গণকমিশনের সচিবালয়ের অন্যান্য সদস্য উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে জঙ্গিদমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দৃষ্টান্তমূলক সাফল্য প্রদর্শন করলেও জঙ্গি মৌলবাদের রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করার কোনো সরকারি উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। যেহেতু এই সন্ত্রাস হচ্ছে ধর্মের নামে এবং নির্দিষ্ট একটি আদর্শকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সেহেতেু জঙ্গি মৌলবাদকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার আদর্শের আলোকে আমাদের শিক্ষানীতি ও সংস্কৃতিনীতি প্রণয়ন করতে হবে। ’৭২- এর সংবিধানে বঙ্গবন্ধু ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। ধর্মের নামে রাজনীতি থাকলে ভিন্নধর্ম, ভিন্নমত ও ভিন্নজীবনধারার অনুসারী মানুষরা বারবার আক্রান্ত হবে, সমাজে উগ্রতা ও সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাবে, আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যহত হবে এবং জাতীয় নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে।’
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার কারণে বহু ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ভুক্তভোগীকে মামলায় আসামি করা হচ্ছে। আমাদের শ্বেতপত্রে ঝুমন দাস, রসরাজ বর্মনসহ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার এ ধরনের ভুক্তভোগীদের প্রতি প্রশাসনের অমানবিক আচরণের বিবরণ রয়েছে, যারা বছরের পর বছর মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গিয়েছে। আমরা অবিলম্বে এসব মামলা প্রত্যাহার এবং সাম্প্রদায়িক হামলার ভুক্তভোগীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার ও অপরাধীদের শাস্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা মোকাবিলার জন্য ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন’ গঠন ও ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নের অঙ্গীকার ছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা আবারও ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ কার্যকর এবং বিচারিক ক্ষমতাসহ ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন’ গঠনের দাবি জানাচ্ছি। আমাদের শ্বেতপত্রে সরকার ও নাগরিক সমাজের জন্য যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, এগুলো বাস্তবায়িত হলে নিশ্চিতভাবে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে পারব।’
এমএ/টিটি