শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক দিয়ে শুরু হচ্ছে ইসির ‘পরীক্ষা প্রস্তুতি’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী সংসদ নির্বাচন সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করাই প্রধান লক্ষ্য নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের। এজন্য গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে নিজেদের কর্মপন্থা চূড়ান্ত করার পথে ইসি।
এ লক্ষ্যে রবিবার (১৩ মার্চ) বিকাল ৩টায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইসি। এই বৈঠকের মধ্য দিয়েই তাদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এরপর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবে ইসি। এভাবে ধাপে ধাপে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বৈঠক করে আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ ঠিক করবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
প্রথম বৈঠকে ৩০ জন শিক্ষককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ড. সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহসহ ৩০ জন। এদের মধ্যে অনেকেই বৈঠকে উপস্থিত হবেন না এমনটাই ধরে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের গ্লানি মুছে দেশবাসীকে ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়াই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বিন্দুমাত্র ফাঁক রাখতে চায় না নতুন ইসি। শুধু সুশীল সমাজ বা শিক্ষক না রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলাপ আলোচনা করে তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে চায় ইসি। কার কী সুপারিশ, কীভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায় সেই মতামত নিতেই এসব বৈঠক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেই নিজেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চায় বর্তমান ইসি। যেন কোনো মহল পরবর্তীতে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তুলতে না পারে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী হবে? কীভাবে দায়িত্ব পালন করলে দেশি বিদেশি মহলের কাছে একটা ভাল নির্বাচন হবে এসব কর্মপরিকল্পনা ঠিক করাই প্রধান লক্ষ্য। আগামী ২২ মার্চ সুশীল সমাজের প্রতিনিধের সঙ্গে বৈঠকের সময় সূচি ঠিক করেছে কমিশন।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরি করবে। যেহেতু ২০২৩ সালের শেষ দিকে অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে সুবিধাজনক সময়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই হাতে এখনো অনেক সময় পাচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। নিজেদের প্রস্তুত করতে একবার নয় একাধিকবার বৈঠক করতেও রাজি কমিশন।
রাজপথের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে মেনে নেয়নি। তাদের বিরোধীতার মুখেই গঠিত হয় নতুন নির্বাচন কমিশন। তাই সকল দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন করাটাই এই কমিশনের বড় চ্যালেঞ্জ। বিষয়টি অনুধাবনও করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ভবনে প্রথম বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সংলাপের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘বিএনপি এরইমধ্যে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে নির্বাচনে যাবে না। যদি ঘোষণা দিয়েও থাকে তারপরও কি আমরা বিএনপিকে আহ্বান করতে পারব না? আপনারা আসেন দুটো কথা বলি, একটু চা খান। এটা তো হতেই পারে।’
নির্বাচন নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে দূরত্ব কমে আসবে। আমরা যদি মুখ ফিরিয়ে রাখি তাহলে কিন্তু দূরত্ব বাড়তে থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত দরকার। দলগুলোকেও কাউকে না কাউকে অহংকার পরিত্যাগ করে মিলেমিশে আলোচনা করতে হবে। নির্বাচন করতে গেলে মনে রাখতে হবে আমরা কতটা সমঝোতায় থাকব, আমরা কতটা পরস্পরের পক্ষে সহযোগিতামূলক আচারণ করব। আমাদের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে, আস্থা রাখতে হবে। আমরা সকলকে নির্বাচনমুখী করতে চাই। এ ব্যাপারে আমাদের তরফ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকবে না।’
সংলাপের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘শুধু সংসদ নির্বাচন না, আমাদের কমিশনের ভবিষ্যত সম্পর্কে তাদের সুপারিশটা কী বা কী বলতে চাচ্ছেন? বা সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সমস্ত বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে।
এরপর ক্রমান্বয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কথা হবে। তবে আমরা টাইম সিডিউল ঠিক করিনি। এখন যেহেতু সেইভাবে নির্বাচন নেই তাই আমাদের হাতে সময় আছে আমরা সকল পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করব। আমরা চিন্তাভাবনা করছি আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব কীভাবে যথাযথভাবে পালন করতে পারি।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। পরদিন তারা শপথ নিয়ে প্রথম অফিস করেন ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর পুরোদমে এখনো কাজ শুরু করেনি কমিশন। এর মধ্যে জাতীয় স্মৃতীসৌধ, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, ভোটার দিবস উদযাপন ও নানা আনুষ্ঠানিকতা করেছেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর এত তাড়াতাড়ি আগের কোনো কমিশন মতবিনিময় বা সংলাপে বসার উদ্যোগ নেননি। অবশ্য দায়িত্ব নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন ‘আমরা দলগুলোকে চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে পারি’।
সর্বশেষ নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল ২০১৭ সাল। সে বছর ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসার মধ্য দিয়ে কার্যত ওই সংলাপ শুরু হয়েছিল। এরপর ৪০টি রাজনৈতিক দল, নারী নেতৃত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের সঙ্গেও বসেছিল তৎকালীন কেএম নূরুল হুদার কমিশন।
সর্বশেষ সংলাপ থেকে আসা সুপারিশের মধ্য থেকে দুটো প্রধান ভাগে ভাগ করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে একটি অংশ নিজেদের এখতিয়ারভুক্ত। অন্যটি সরকারের এখতিয়ারভুক্ত। সরকারের এখতিয়াভুক্ত সুপারিশগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায় কমিশন। আর অন্যগুলো নিজেদের কর্মপরিকল্পনার ভেতর অন্তর্ভুক্ত করে কমিশন।
এসএম/এমএমএ/