বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ঢাকার
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা। এক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। ইতোমধ্যে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগসহ নানা প্রক্রিয়ায় এগুচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, দুই বছর পর ঢাকা-ওয়াশিংটন সংলাপ শুরু হচ্ছে। নানা কারণে গত দুইবছর বৈঠকগুলো হয়নি। মোট সাতটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে আগামী দুই মাসের মধ্যে। প্রথম বৈঠক হবে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে, ২০ মার্চ ওয়াশিংটনে।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গত দুই বছর ধরে দুদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর হয় না। তাই আগামী দুই মাসে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকগুলোতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে ঢাকা। এর পাশাপাশি থাকছে রোহিঙ্গা ইস্যু।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু র্যাবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়াই হয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে, তাই বৈঠকগুলোতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি মানবপাচার রোধে বাংলাদেশের সাফল্যও তুলে ধরা হবে।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ সম্পর্কোন্নয়নে লবিস্ট ফার্ম
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে এক বছরের জন্য নেলসন মুলিন্স নামের একটি লবিস্ট ফার্মকে নিয়োগ করেছে সরকার। এজন্য প্রতিমাসে সরকারের ব্যয় হবে ২০ হাজার মার্কিন ডলার।
এর আগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রতিটি বিষয় নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। চিঠিতে মাদক ও জঙ্গি নির্মূলে র্যাবের ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছিল।
মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির তাগিদ
চলতি মাসের শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে ফ্রান্স ও জার্মানি সফর করেন। এর পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে মার্কিন কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং এবং কংগ্রেসম্যান জেমস ম্যাকগভর্নকে র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার উপায় খুঁজে বের করতে অনুরোধ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় আশ্বস্ত করেন যে র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ প্রস্তুত আছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নর্থ ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ তুরষ্কের সংবাদ সংস্থা আনাদলু এজেন্সিকে বলেন, সরকারকে লবিং না করে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। এটা শুধু র্যাবের বিষয় নয়, রাষ্ট্রের সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে হবে।
তবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি করতে বললেও পরিস্থিতির উন্নতি কিছু হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে। গত তিন মাসে বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়নি। এটা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যদিও ‘জিরো ক্রসফায়ার’ শুধু এবারই নয় এর আগেও একবার হয়েছিল। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে মেজর (অব.) সিনহার ক্রসফায়ারের পরবর্তী ৫ মাস কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়নি। ওই ৫ মাসে শুধু সিলেটে একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল।
প্রসঙ্গত, গত ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বর্তমানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খান।
আরইউ/আরএ/