ঢাকায় এফএওর আঞ্চলিক সম্মেলন
ডিজিটালাইজড কৃষি নিশ্চিত করা মূল লক্ষ্য: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে সবুজায়ন বৃদ্ধি এবং জলবায়ুসহনশীল ও ডিজিটালাইজড কৃষি নিশ্চিত করাই জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ৩৬তম এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনের লক্ষ্য।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) এফএও সম্মেলনের মন্ত্রী পর্যায়ের ১ম দিনের ১ম সেশন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, ও খাদ্যসচিব নাজমানারা খানুম উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফএও সম্মেলনের মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সম্মেলনের মূল ভেন্যু হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা গবেষণা ও উদ্ভাবনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। টেকসই কৃষিখাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে ফসলের নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তা সম্প্রসারণ করতে হবে। এই সম্মেলনে ৪৬টি দেশ এ বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও সফলতার আলোকে মতবিনিময় করছে এবং প্রযুক্তি বিনিময় করবে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ সম্মেলনে ডিজিটালাইজড কৃষি গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ, যান্ত্রিকীকরণ ও এগ্রো-প্রসেসিং মাধ্যমে আধুনিকীকরণে কাজ করছে।
তিনি জানান, কৃষি উৎপাদন থেকে কনজামশন পর্যন্ত অর্থাৎ মাঠে প্রযুক্তি নিয়ে যাওয়া, কৃষককে পরামর্শ প্রদান, ফসল উৎপাদন, হার্ভেস্ট, মজুত, মার্কেটিং এবং প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। কম্পিউটার রোবটের মতো উন্নত প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আবহাওয়ার পূর্বাভাস অন্যান্য বিষয়গুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতের বিষয়ে অলোচনা হয়েছে।
ড. আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, এশিয়া প্যাসিফিকে যে খাদ্য যতটা পাওয়া যাচ্ছে সেটা যেন নিরাপদ এবং পুষ্টিকর হয়-সেটা নিশ্চিত করতে সকল দেশ একমত রয়েছে। সে বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ সম্মেলনে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন, খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রচুর প্রশংসা হয়েছে। বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে দেখছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলো।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সক্ষমতা বাংলাদেশের এসেছে। যে সকল ফসল ও শস্য উৎপাদন এ দেশে চিন্তা করা যেত না সেটাও উৎপাদন হচ্ছে। এ বিষয়গুলো এ সম্মেলনে আলোচনা হচ্ছে ও অন্যান্য দেশ এর ভূয়সী প্রশংসা করছে।
তিনি বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এত বড় সম্মেলন অত্যন্ত সফলভাবে আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছে। এতে সারা বিশ্বে বার্তা গেছে, এই বাংলাদেশ আর পিছনে পড়ে থাকার বাংলাদেশ নয়। এফএও’র এত বড় সম্মেলন বাংলাদেশ যে এককভাবে করতে পারে, এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষযক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনকে মোকাবিলা করে কীভাবে আরও উৎপাদন বাড়ানো যায় সেটা এ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসবে। সেটা বাংলাদেশের জন্য বড় সহায়তা হবে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ছিল এফএও’র এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনের তৃতীয় দিন এবং মন্ত্রিপর্যায়ের প্রথম দিন। দিনের শুরুতে প্রথম সেশনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সভাপতি নির্বাচিত হন। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৃষি, খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরে উদ্ভাবন, বিজ্ঞান ও ডিজিটালাইজেশন এবং দেশভিত্তিক অগ্রাধিকার নিয়ে সদস্য দেশের মন্ত্রীরা সম্মেলনে আলোচনা করেন।
এর আগে দুদিন এফএও’র সদস্য দেশগুলোর কৃষি সচিবদের নিয়ে সিনিয়র অফিসিয়াল মিটিং হয়েছে। এরপর শুরু হয়েছে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক।
এনএইচবি/এমএমএ/