'রিয়াজ উদ্দিন ছিলেন ভালো সাংবাদিক ও ভালো মানুষ'
![](https://admin.dhakaprokash24.com/logo/placeholder.jpg)
প্রয়াত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, অবিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা ও ফিনান্সিয়াল হেরাল্ড এর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন ভালো সাংবাদিক, ভালো নেতা ও ভালো মানুষ। তার অভাব পূরণ হওয়ার নয়।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর আহমেদ চৌধুরী হলে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে এসব কথা বলেন সাংবাদিক নেতা ও সম্পাদকরা।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, 'তারা এমন একজন বাবাকে হারিয়েছেন, পরিবারের এমন একজনকে হারিয়েছেন যাকে নিয়ে, যার পরিচয় নিয়ে তারা গর্ব করতে পারেন। রিয়াজ ভাই বয়সে বড় ছিলেন। তবে আমরা প্রায় একই সময়ে সাংবাদিকতা শুরু করি। পাকিস্তান অবজারভারে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। হোসেন সাহেব ইংরেজি সাংবাদিকতায় অর্থনৈতিক রিপোর্টার হিসেবে তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন।'
তিনি বলেন, 'আমরা একসঙ্গে ছাত্রলীগ করেছি। তিনি এসএম হলে থাকতেন। আমি সেই সময়ের জিন্নাহ হল পরবর্তীতে সূর্যসেন হলে থাকতাম।'
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, 'আমাদের সাংবাদিকতায় যে নির্বাচন অর্থাৎ সাংবাদিক ইউনিয়ন সেখানেও আমরা একসঙ্গে একই প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, এক পর্যায়ে রিয়াজ ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের পথটি দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। তিনি একটি ধারায় চলে গেলেন। আমরা তারই রেখে যাওয়া যে ধারা তাকে এগিয়ে নিয়ে গেলাম। আমাদের রাজনৈতিক মতে ভিন্নতা থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনে কোনো বৈরিতা আসেনি।'
তিনি আরও বলেন, 'সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আমরা এক সময় ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক ইউনিয়নের পতাকা নিয়ে আন্দোলন করেছি। কিন্তু আমরা সেই পতাকা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন করেছি, গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, আমরা আমাদের নিজেদের পতাকা ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারিনি।'
তিনি বলেন, ৯১-৯২ সালে আমরা বিভক্ত হয়ে গেলাম। শুধু নেতৃর্ত্বের কারণে নয়, আমরা বিভক্ত হলাম রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। একপক্ষ আমরা থেকে গেলাম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। আরেকটি জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষে। এর সঙ্গে ছিল জামায়াত। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা এখনও বিভক্তই আছি। এই যে বিভক্তি সেখান থেকে আমরা এখনও বের হয়ে আসতে পারিনি। এর ছায়া বিভিন্ন সময়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবেও পড়েছে।'
ইকবাল সোবহান বলেন, 'রিয়াজ ভাইয়ের সবচেয়ে বড় যে বৈশিষ্ট্য, তিনি সাংবাদিক ছিলেন। তিনি রিপোর্টার হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন এবং সম্পাদকও ছিলেন। তিনি ইউনিয়ন করেছেন, ইউনিয়নের সাংবাদিকদের রুটি রুজির আন্দোলন করেছেন। পরবর্তীকালে তিনি মালিক হয়েছিলেন এবং মালিকদের সংগঠনে যোগদান করেছেন।'
তিনি বলেন, 'আজ তিনি সকল প্রশংসা ও সমালোচনার ঊর্ধ্বে। তিনি প্রেস ক্লাবে ছিলেন, ইউনিয়নে তিনি ছিলেন। সাংবাদিকতায় তিনি ছিলেন। আমরা তার সঙ্গে ছিলাম। তিনি থাকবেন আমাদের মাঝে।'
মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, 'রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ একজন ভালো সাংবাদিক, ভালো মানুষ ও ভালো নেতা ছিলেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে অভিভাবক তুল্য ছিলেন। তার অনুপস্থিতি আমরা অনুভব করব।'
সাইফুল আলম বলন, 'আজকে সাংবাদিকতা বিভক্ত নানা পথে, নানা মতে। কিন্তু রিয়াজ ভাই ছিলেন বিভক্ত সাংবাদিকদের অবিভক্ত নেতা।'
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে মাসরুর রিয়াজ বলেন, 'বাবা তিনটা বিষয়ে সব সময় বলতেন। শিক্ষা, সততা ও কঠোর পরিশ্রম। এই তিনটা বিষয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন।'
বাবার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে বাবা বললেন তার সিডান কার পরিবর্তন করতে চান। বললাম, 'তুমি একটা জিপ কিনে নাও। মায়ের একটু কোমরে ব্যথা। জিপ হলে মায়ের জন্য স্বস্তি হবে।' কিন্তু তিনি রাজি হলেন না। বললেন, 'জীপ চালালে মানুষ ভিন্ন চোখে দেখবে। বলবে, দেখ সাংবাদিক জীপ চালায়।'
মাসরুর বলেন, 'আব্বার জন্য আপনাদের যেকোনো উদ্যোগে আমরা যদি শরিক হতে পারি, সহযোগিতা করতে পারি তাহলে বাবার প্রতি আমাদের ভালোবাসাটা জানাতে পারব।'
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'তিনি এমন একজন নেতা ছিলেন যে, সবাইকে আগলে রাখার চেষ্টা করতেন। এমনকি যারা নির্বাচনে তার সঙ্গে হেরে যেতেন তাদেরও আগলে রাখতেন।'
সভাপতির বক্তব্যে এ ক আজাদ বলেন, 'তিনি যখন নিউজ টু ডে থেকে নোয়াব এ আসলেন তখন তার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা। তার আগে একটু আধটু জানাশোনা ছিল। তিনি চারবার অবিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। তিনি নির্বাচন করতে চাইতেন না। অ্যাসিস্ট করতেন। রিয়াজ ভাই যে সম্মান নিয়ে গেলেন আমাদেরকেও একইভাবে যেতে হবে। রিয়াজ ভাই নিজের সন্তানদের সততার কথা বলতেন। এটা তখনই সম্ভব যখন তিনি সৎ থাকেন।'
নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, যুগান্তর সম্পাক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, বিএফইউজে'র সভাপতি ওমর ফারুক, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে মাসরুর রিয়াজ।
এনএইচবি/টিটি
![Header Ad](https://admin.dhakaprokash24.com/images/single-post-anniversary.jpeg)