চিরনিদ্রায় শায়িত সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ
সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তিন দফা জানাজা শেষে একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এ দিন সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এবং পরে জন্মস্থান নরসিংদীতে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় নবীন, প্রবীণ সাংবাদিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা,কর্মীসহ সমাজের সর্বসাধারণ তাকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে নিয়ে আসা হয় ক্লাবের তিন মেয়াদের সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদের মরদেহ। সেখানে রিয়াজউদ্দিন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি এ কে আজাদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের তিন সাবেক সভাপতি--শওকত মাহমুদ, শফিকুর রহমান ও সাইফুল আলম--বর্তমান সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বুলবুল, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কাদের গনী চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নির্বাচন কমিশনের সদস্য এম শাহজাহান মিয়া, মনজুরুল আহসান বুলবুল ও এম এ আজিজ প্রমুখ।
জানাজায় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত হয়েছেলেন, এডিটরস গিন্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেলন হোসেন, নিউ এজের প্রকাশক এসএসএম শহিদুল্লাহ খান।
জানাজার আগে স্মৃতিচারণ করে উপস্থিতির উদ্দেশ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, “তার এই মৃত্যুতে অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে সাংবাদিকতা পেশায়। পৃথিবীতে কোনো শূন্যতা থাকে না। তবে হয়ত উনাকে হারানোয় যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা এখনোই পূরণ হবে না। উনার ভালো গুণগুলো আমাদের সকলের স্মরণ রাখা দরকার। তার সাহস, দেশপ্রেম, বস্তুনিষ্ঠতা, সাংবাদিক শ্রেণির জন্য তার দরদ-অবদানকে আমাদের স্মরণে রাখতে হবে।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'রিয়াজ ভাইয়ের চলে যাওয়া আমাদের সকলের জন্যই বেদনার, কষ্টের। উনি সেই সাংবাদিক, যিনি গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দিয়ে, তার মেধা দিয়ে সাংবাদিকতাকে সবসময় সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন।'
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, 'সবার সঙ্গে মিলে-মিশে কাজ করার একটা স্বভাবসুলভ গুণ ছিল রিয়াজ ভাইয়ের, আমরা যেন সেই গুণ আমাদের মধ্যে আনতে পারি। উনার সাংবাদিকতার মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা যেন আরো উন্নত স্তরের সাংবাদিক হতে পারি, এই প্রত্যাশা রইল।'
নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-নোয়াবের সভাপতি একে আজাদ বলেন, 'আমি বলব, রিয়াজ সাহেবের জীবনের যে উল্লেখযোগ্য অবদান এই প্রেসক্লাবের জন্য, সাংবাদিকদের জন্যে, সাংবাদিক ইউনিয়নের জন্যে, নতুন প্রজন্ম যেন তার জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি, রিয়াজ ভাইয়ের আদর্শকে যেন আমরা ধারণ করতে পারি। তিনি আমাদের মাঝে চিরদিন বেঁচে থাকবেন।'
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সম্পাদক শওকত মাহমুদ বলেন, 'রিয়াজ ভাই তার সাংবাদিকতার চৈতন্যবোধ দিয়ে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে যখন তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন, তখন আমি তার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমি লক্ষ্য করেছি, সাংবাদিকতার প্রতি তার যে মর্মত্ববোধ, সাংবাদিকতার প্রতি তার যে দায়িত্ববোধ, সর্বোপরি গণতন্ত্র সমুন্নত রাখা জন্য তার যে ভূমিকা, তিনি তা নিষ্ঠার সাথে পালন করে গেছেন। আজকে আমরা অভিভাবকশূন্য হয়ে গেছি।'
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, 'রিয়াজ ভাই একজন ভালো সংগঠক ছিলেন, ভালো অভিভাবক ছিলেন। পেশার প্রতি তার যে আত্মনিবেদন, তার কোনো তুলনা নেই। সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে কখনো তিনি আপস করেন নাই।'
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, 'রিয়াজ ভাইকে নিস্তব্ধ নিথর রেখে আজকে আমরা কথা বলছি, এটা আমরা কয়েকদিন আগেও ভাবতে পারিনি।'
বক্তব্যে গত বছর মহামারী শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসান শাহরিয়ারসহ ৩৯ জন সদস্যের মৃত্যুর কথা তুলে ধরে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ফরিদা ইয়াসমিন।
শ্রদ্ধা নিবেদন ও জানাজা শেষে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে রিয়াজউদ্দিন আহমেদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার জন্মস্থান নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার গ্রামের বাড়িতে। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার মরদেহ নেওয়া হয় বারিধারার বাসভবনে। বারিধারা দূতাবাস রোড মসজিদে তৃতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এ সময় রিয়াজউদ্দিনের ভাই অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল জয়নাল আবেদীন এবং একমাত্র ছেলে মাশরুর রিয়াজও উপস্থিত ছিলেন।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দুপুরে মারা যান সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন।
এমএ/এমএমএ/