বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২২ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক গল্প: পর্ব- ৩

অস্ফুট ভালোবাসা

অনিন্দ্যের আজ ডে অফ। গতকাল ফারাহকে সেটা জানানো হয়নি। তাহলে একটু দেরিতে ফোন করত। ঘড়ির দিকে তাকায় অনিন্দ্য। ১১টা। এখনই বাবার ফোন আসবে। বাবার সঙ্গে আমার দেখা হয় সপ্তাহের ছুটির দিন। কারণ আমি যখন বাড়ি ফিরি বাবা তখন ঘুমান। আবার তিনি যখন বাড়ি ফিরেন তখন আমি অফিসে। তাই চেষ্টা থাকা সত্বেও বাবার সঙ্গে আমার দেখা হয় না। ভাবতে ভাবতে অনিন্দ্য বিছানায় উঠে বসতেই ফোনটা বাজল।

কলিং বেলের শব্দ শুনে ফারাহ এসে দরজা খুলল। যতটা অবাক হবে ভেবেছিলাম ততটা হয়নি। শুধু বলল একি সূর্য আজকে কোন দিক দিয়ে উঠেছে। আজ অফিস নেই আমাকে আগে বলোনি কেন?

-সারপ্রাইজ দেব বলে।

-ভালইতো। তো কি ব্যাপার হঠাৎ মনে এত ভালোবাসা জেগে উঠল যে।

-তোমার কি শরীর খারাপ না মন খারাপ?

-দুটোই ভাল আছে।

-তা হলে তোমার কথা এমন তেতো শুনাচ্ছে কেন?

-আমার কথা তোমার কাছে আজ তেতো শুনাবে, কাল শুনতে ইচ্ছে করবে না। পরে বলবে আর যোগাযোগ করোনা। এভাবেই তো। সম্পর্ক শেষ।

-ভালোই তো গল্পটা। তুমি লিখে রাখ না কেন? তোমার কথার এক একটা লাইন একদিন বিশাল উপন্যাস হয়ে যাবে।

-তাই নাকি। চলো ঘরে ভালো লাগছে না কোথাও বেড়িয়ে আসি।

-আমার ইচ্ছে ছিল। থাক তোমার বোধ হয় আজ মন ভালো নেই।

-বেশি বকবক করো না তো। চল।

আশুলিয়া পৌঁছতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। পথে ফারাহ খুব চুপচপ ছিল। কারণটা অনিন্দ্য এখনও জানে না। তবে কিছু একটা যে হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আচ্ছা অনিন্দ্য এ জায়গাটারতো আহামরি কোন সৌন্দর্য নেই, তবু মানুষ জায়গাটকে এত সুন্দর বলে কেন বলোতো।
জানি না। হয়তো লেকটার জন্য। হয়তো মুক্ত পরিবেশটার জন্য। আমরা শহুরে মানুষগুলো তো সারাদিন ইট, পাথর, ধোঁয়া, গাড়ি আর মানুষ ছাড়া কিছুই দেখতে পাই না। রাতে আকাশ দেখা যায় তাও আবার শহরের চাকচিক্যের সঙ্গে উপভোগ্য নয়। ডোবা দেখলেই বলে উঠি কি সুন্দর লেক। আর ওই ডোবার মালিক মুচকি হাসে।

আসলে আমরা মানুষ আমাদের পৃথিবীটাকে অসুন্দর করে গড়ে তুলছি। এই যে দেখো একটু মুক্ত বাতাসের জন্য আমাদের কত দূর আসতে হয়েছে। অথচ শহরটা যদি পরিকল্পিত হতো তাহলে তোমাদের বাড়ির গেটের কাছে বসে প্রেম করতে পারতাম।

ফারাহ অনেকক্ষণ পর হাসিতে ফেটে পড়ল।

তবে এটাও ঠিক তখন আর সুন্দরের এত কদর থাকত না। তোমার মতো রোমিওরা বাড়ির গেটের সামনে বসে পড়ত। আর মা বাবার হাতে ধরা খেয়ে বিরহে দিন কাটাত। আসলে সুন্দরকে কখনই কোনো বৃত্তের মাঝে বন্দি করে রাখতে নেই। সুন্দর হবে দূর আকাশের মতো। যাতে মানুষ দূর থেকে একে উপলব্ধি করতে পারে।  

দেখতে দেখতে সূর্য ডুবে গেল। তবে পশ্চিম আকাশের লালিমা তখনো কাটেনি। পাখি ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাচ্ছে। গল্প কবিতায় এমন ডায়লগ পড়েছি। কিন্তু বাস্তবে এর উপলব্ধি আজকের মতো আগে আর কারিনি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার পেশাটা আমার জীবনের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। মাঝে মাঝে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে ফেলে আসা ছাত্র জীবনে। যে সময়টায় ইচ্ছে করলেই কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়া যেত। বাঁধন হারা পাখিদের মতো ঘুরে বেড়ানো যায়। আজ বাবা আমার কাছে সময় চান। দিতে পারি না। ফারাহ চায় আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে কিন্তু পারি না। আমার যে একটা সুন্দর মন আছে ফারাহ অনেক সময় মানতেই চায় না। বলে তোমাদের সাংবাদিকদের আবার সুন্দর মন। সারা দিন যাদের কাজ অসুন্দরকে ঘিরে। বলে তোমরা সাংবাদিকরা প্রতিদিন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা খারাপ সংবাদ ছাপাও। মনে হয় পৃথিবীতে কোনো ভালো খবর নেই। আমি বলি কি করব খারাপ ঘটনা ঘটে বলেইতো আমরা পত্রিকা বের করতে পারি আর পাঠক সেটা পয়সা দিয়ে কেনে।

আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। আমরা অনেকক্ষণ নীরব সময় কাটিয়ে দিয়েছি। মনে হয় কেউ যেন কারো নীরবতাকে ভাঙতে চাচ্ছি না। তবে ফারাহর যে কিছু একটা হয়েছে তা আমি বুঝতে পারছি। সে এতটা চুপচাপ থাকার মেয়ে না।

ফারাহ, সন্ধ্যা হয়ে গেছে উঠবে নাকি। ফারাহ কিছুটা চমকে উঠল।

-থাকি না আর কিছুক্ষণ। তোমার কি কোনো কাজ আছে।

-না আজকের দিনটা শুধু তোমার জন্য রেখেছি।
তাই নাকি। ফারাহ একটু মুচকি হাসল।

-আচ্ছা তোমার কি হয়েছে বলোতো?

-কই কিছু নাতো।

-তাহলে এমন মুখ ভার করে বসে আছ কেন?

-তুমি কি কোনো হাসির কথা বলেছ যে হাসব?

-তা না বললেও তোমার চেহারা দেখে বুঝা যায় তোমার কিছু একটা হয়েছে।

-না। কিছু হয়নি। তুমি যাবার আগে বাবার সঙ্গে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে।

-কি নিয়ে জানতে পারি।

-ওই একই বিষয়। বিয়ে করছি না। আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করছি না। এইতো।

-উনার কথারতো যুক্তি আছে। চাকরিটা না হয় নাই করলে। তোমার তো বিয়ের বয়স হয়েছে। বিয়েটা করে ফেলতে পার।

-ফারাহ একটু গম্ভীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। কাকে বিয়ে করব?

-কেন তোমার যাকে মন চায় তাকেই করো। আমার সঙ্গে তোমার ভালোবাসার সম্পর্ক আছে তাই বলে যে আমাকে বিয়ে করতে হবে এমনতো কোনো কথা নেই।

-আমি কিন্তু বলিনি তোমাকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করব না। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। অনিন্দ্য এখানেই তো সমস্যা। আমি কাকে বেছে নেব। যার সঙ্গে আমার মনের মিল হয় তাকে? নাকি কোনো অপরিচিত একজনকে। যাকে আমি চিনি না। জানি না।

-আচ্ছা অনিন্দ্য, আমাকে ঘিরে তোমার কোনো স্বপ্ন নেই?

-আসলে এ বিষয়টি নিয়ে কখনো ভাবিনি। আসলে ফারাহ তুমি আমার প্র্যাকটিকেল লাইফে মিশে গেছো। তোমাকে জড়িয়ে কিংবা তোমাকে ছাড়া কোনো ভাবনা আমার মনে আসেনি। আজ থেকে না হয় ভাবব তোমাকে নিয়ে আসলেই আমার কোন স্বপ্ন আছে কি না?

গাড়িটা গেটে ঢুকতেই দেখি ফারাহর বাবা আশরাফ চৌধুরি দোতালার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ফারাহকে বললাম আমি চলে যাই। কিন্তু তিনি আমাকে ভেতরে নিয়ে যেতে বললেন ফারাহকে।

ফারাহর বাবার মুখোমুখি অনিন্দ্য এর আগেও বেশ কয়েক বারই হয়েছে। কিন্তু প্রথম প্রথম তিনি যে ভাবে আমাকে ডেকে নিত এখন তা করেন না। বিশেষ করে চট্টগ্রাম স্টেশনে তিনি আমাকে যেভাবে জড়িয়ে ধরে ছিলেন এখন সে দৃষ্টি তার নেই। হয়তো মেয়ের সঙ্গে প্রেম করাটাকে উনি পছন্দ করছেন না। আজ ফারাহর বাবার মুখোমুখি হতে কেমন যেন একটু অন্যরকম লাগছে। ড্রইং রুমে কিছুক্ষণ বসার পর ফারাহর বাবা এলেন।

-তোমাদের পত্রিকার কী অবস্থা? কাটতি কেমন? আমাকে অবশ্য বন্ধুরা পত্রিকার ব্যবসায় নামাতে চায়। আমিই পিছিয়ে যাচ্ছি। আসলে আমিতো এ জগতের মানুষ না। আমার ব্যবসার জগতটাই ভিন্ন। তুমি কি বলো।

-আপনি ঠিকই বলেছেন। তবে এটাও ঠিক আজকাল শিল্পপতিরা টাকার জোরে সব কিছুই করিয়ে নিচ্ছে। আর পত্রিকার ব্যবসাতো মালিকের শুধু অর্থই সর্বস্ব। বাকি কাজতো করেন এমপ্লয়িরা।

-তা হয়তো করেন। তবে অভিজ্ঞতারও তো একটা ব্যাপার আছে।

-তা তোমার অবস্থা কী। এ পেশায় কি নিজেকে সেট করতে পেরেছ?

-মোটামুটি ।

-ভালো করে চেষ্টা চালিয়ে যাও। আমার কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলে বলো। আগে জীবনে ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হও তাহলে এক সময় সবই পাবে। আর ফারাহর ব্যাপারে তোমার কাছ থেকে আমি সহযোগিতা চাই। মেয়েটা বড় বেশি একরোখা। ওকে তুমি বুঝাও। আমাদের সমাজে মেয়েদের এমন হলে চলে না। জীবনটা কোনো পুতুল খেলা না। আমার জীবনে আমি অন্তত হারে হারে বুঝেছি। সঠিক সময়ে সঠিক সিন্ধান্ত নিতে না পারলে এর ঘানি সারা জীবন টানতে হয়।

-ফারাহরকে আমি কোন দিকটা বুঝাব?

-তোমাকে খোলামেলা ভাবেই বলি। আমি ফারাহকে সারা জীবনে কোনো অভাব বুঝতে দেইনি। তাই আমি ওর বাকি জীবনের সুখটাও দেখতে চাই। তুমিতো জান আমার কোনো ছেলে নেই । ফারাহই আমার সব। ওকে সুখী করতে পারলে আমার জীবনের সব স্বপ্ন পূরণ হবে। আর তাই আমি চাই তাকে এমন একজনের হাতে তুলে দিতে যাতে সে বাকি জীবনটা সুখে কাটাতে পারে।

-ঠিক আছে আংকেল আমি ওকে বুঝিয়ে বলব।

ফারাহর বাবার কথাগুলো অনিন্দ্যের কানে সারাটা পথ ভাসছিল। অনিন্দ্য তার ভাষায় অন্তত এটুকু বুঝেছে তিনি ফারাহর জন্য তাকে মনোনয়ন দেননি। তাতে কি করার আছে অনিন্দ্যের। সে বিষয়টা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল। কিন্তু সে কি করবে। সাংবাদিকতা পেশায় পাঁচ বছর হয়েছে। এখনও প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। পত্রিকার কাটতিও ভালো না। অনেকেই ভালো অফার নিয়ে অন্য পত্রিকায় চলে গেছে। কিন্তু তার যাওয়া হয়নি। কারো কাছে গিয়ে চাকরি চাইতে তার খারাপ লাগে। নিজেকে ছোট মনে হয়। অনিন্দ্য কারো কাছে চাকরি চাইতে যায়নি। মাঝে একটা অফারও পেয়েছিল। কিন্তু সেখানকার সম্পাদককে সে পছন্দ করে না। লোকটার কোনো নীতি নেই। কারণটা তার কাছে বেশ পরিস্কার। লোকটা এর আগেও পত্রিকা খোলার জন্য কিছু সাংবাদিককে ভালো অফার দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু পরে সে পত্রিকাটি বের করেনি। ছয় মাস লাপাত্তা ছিল। পরে জানা গেল এক উঠতি মডেলের প্রেমে পড়ে বিদেশ চলে গিয়েছিল। তাকে বিয়ে ও করেছিল। কিন্তু তার সে সংসার দুমাসও টিকেনি।

জানা গেছে ওই মডেল নাকি কোনো সিনেমার প্রডিউসারের হাত ধরে ভেগে গেছে। লোকটার এটা ছিল তৃতীয় বিয়ে। বিদেশ যাবার আগে যারা তার ওপর ভরসা করেছিল তাদের কেউ কেউ এখনো বেকার। সুতরাং এ ধরনের লোককে বিশ্বাস করাটা বোকামি। অনিন্দ্যকে তিনি ডেকে ছিলেন। অনেক বড় বেতনের অফারও করেছিলেন। কিন্তু সে রাজি হয়নি। লোকটার মুখের ওপর সে বলে এসেছে আগে আপনি ঠিক করেন আপনি এ পেশায় থাকবেন নাকি ধান্দাবাজি করে বেড়াবেন।

বাসায় ঢুকতেই অনিন্দ্য বাবার সামনে পড়ল।

-কি আজ অফিস যাওনি?
-না। ডে অফ ছিল।
-তোমার চাকরি কেমন চলছে?
-ভালো।
-কেমন ভালো?
-মোটামুটি ভালো।
-এ পেশাতেই থাকবে? না অন্য কোথাও চেষ্টা করবে।
-কেন এই পেশাতে সমস্যা কী?

 -সমস্যার কথা বলছি না। বলছি এ পেশায় থেকে ভালো করতে পারবে মনে হচ্ছে কি না। হতে পারে না, ভালো না লাগা স্বত্ত্বেও করছ। তা ছাড়া এ পেশাতে তো টাকা পয়সা তেমন নেই। পত্রিকার মালিকরা শুনেছি সব সময় কর্মীদের ঠকাতেই ব্যস্ত থাকে। তাই বলছি যদি তুমিও যদি এমন ভাবো তা হলে আগে ভাগে চেষ্টা কর। সময় হারিয়ে গেলে পস্তাতে হবে।

-দেখি আর কিছু দিন। পরে না হয় অন্য চেষ্টা করব।

-আশরাফ সাহেব কাল ফোন করেছিল।

-চমকে উঠল অনিন্দ্য। কী বলল?

-অনেক কিছুই তো আলাপ হলো। অনেক ভাবনারও উদয় করে দিল। দেখো ফারাহকে নিয়ে তুমি কী ভাবছ? আমাকে একটু খোলাসা করে বলো তো।

-কি বলব। তুমি তো সবই জান। শুধু তুমি না এ ঘরের সবাই জানে ফারাহ কে কি। তারপরও তুমি আমার কাছে কী জানতে চাইছ?

অনিন্দ্যের মা এসে যোগ দিল বাপ ছেলের আলোচনায়।

অনিন্দ্যের মা বলল, দেখ বাবা, তুই আর তোর আপা আমাদের অনেক আদরের সন্তান। তোর বোনোর বিয়ে হয়েছে। সে ভালো আছে। এটা আমাদের অনেক তৃপ্তি দেয়। তুই আমাদের একমাত্র ছেলে। আমরা তোর সুখ চাই। শান্তি চাই। আমরা চাই এমন একটা মেয়ে এ ঘরে আসবে যে আমাদের সংসারটা আগলে রাখবে। ফারাহ অনেক ধনী ঘরের মেয়ে। হয়তো তোর সঙ্গে সে মানিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু সংসার জীবনটা অন্য রকম। সে কি আমাদের মতো করে চলতে পারবে? তুই একটু ভাল করে ভেবে দেখ।

অনিন্দ্যের বাবা বললেন, তুমি তাকে অনেক পছন্দ কর ঠিক আছে, সেও হয়তো তোমাকে অনেক পছন্দ করে, কিন্তু তার বাবা চাইছে কি না তাও তোমাকে দেখতে হবে।

- ফারাহর বাবা তোমাকে আর কী বলেছে?
- বলেছে তোমাকে বোঝাতে। তোমার এ রোজগারে ফারাহর সংসার চলবে না। এটা জানাতে।
-ঠিক আছে আমি ভেবে দেখি কী করা যায়।

 

(চলবে..)

আরও পড়ুন:

ধারাবাহিক গল্প: পর্ব- ২

ধারাবাহিক গল্প: পর্ব- ১

 

Header Ad
Header Ad

খুলনায় ছাত্র-জনতার উচ্ছ্বাস, বুলডোজারের আঘাতে মাটিতে মিশে গেল ‘শেখ বাড়ি’

ছবি: সংগৃহীত

খুলনার ময়লাপোতা এলাকায় ‘শেখ বাড়ি’ নামে পরিচিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র আজ (বুধবার) রাতে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের আহ্বানে বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা সেখানে জড়ো হয়ে বাড়িটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং সিটি করপোরেশনের দুটি বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে গত ৪ আগস্ট ‘শেখ বাড়ি’তে প্রথম দফায় আগুন লাগানো হয়। সেদিন বাড়িটি খালি থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর আবারও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়। একসময় যেখান থেকে খুলনা অঞ্চলের আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো, আজ সেটির অস্তিত্ব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো।

প্রসঙ্গত, ‘শেখ বাড়ি’ ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচার মালিকানাধীন। এ বাড়িতে তাঁর চাচাতো ভাই, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সোহেল উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন পরিবারের সদস্য বসবাস করতেন। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে এ বাড়ি দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা ছিল।

বুলডোজার চালানোর সময় ছাত্র-জনতার বিপুল উচ্ছ্বাস লক্ষ করা যায়। তাঁদের দাবি, বৈষম্যমূলক রাজনৈতিক শাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছিল এই বাড়ি, তাই এটিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য।

Header Ad
Header Ad

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতার ঢল, বুলডোজার ছাড়াই গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতার ঢল নেমেছে। আজ বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে, সন্ধ্যা ৮টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা জড়ো হয়। তারা স্লোগান দিতে দিতে জাদুঘরের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং ভাঙচুর শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ জাদুঘরের বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত করে।

নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার ঘোষণার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভকারীরা শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের বিরোধিতা করে এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

বিক্ষোভের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২' নামে একটি কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়, যেখানে বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়। তবে, বুলডোজার ছাড়াই তারা নিজ হাতে ভাঙচুর চালায়।

এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও বিক্ষোভকারীদের থামাতে ব্যর্থ হয়। বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উল্লেখ্য, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে পরিচিত, যেখানে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার আগে বসবাস করতেন।

Header Ad
Header Ad

আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা কী করলাম বা করলাম না- ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেটি দিয়ে আমাদের বিচার করবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. ইউনূস বলেন, দেশের রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে এবং এর ভিত্তিতেই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। তিনি আরও বলেন, "এটি জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। আমি জাতির পক্ষ থেকে কমিশনের দুই চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্যকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।"

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "এই দুটি প্রতিবেদন দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে। আপনি দরিদ্র, মধ্যবিত্ত বা ধনী যেই হোন না কেন, এই সংস্কারের প্রভাব থেকে কেউই বাদ যাবেন না।"

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, "কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নাগরিকরা তাদের প্রকৃত অধিকার ফিরে পাবেন। আমরা যেন সত্যিকারের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাই, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।"

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "যাতে সবাই মনে করতে পারে, এখানে প্রকৃত সত্য বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে। আমাদের তো পণ্ডিত হতে হবে না এটি বোঝার জন্য, কারণ প্রতিদিনই আমরা নানা অবিচারের শিকার হই।"

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, "সংস্কার কমিশনের কাজ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিশ্বের দরবারে এটি তুলে ধরতে হলে এর ইংরেজি অনুবাদ করা প্রয়োজন।"

কমিশনের সদস্যদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, "আপনাদের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও গবেষণার সংমিশ্রণে এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দলিল হয়ে থাকবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা কী করলাম বা করলাম না, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের সেই কাজের জন্যই বিচার করবে। তারা প্রশ্ন করতে পারে, আপনারা তো পেয়েছিলেন, তাহলে বাস্তবায়ন করেননি কেন? কারণ, সবকিছু তো বইয়ের পাতায় লেখা আছে। এই কাজ জাতির জন্য এক মূল্যবান স্মারক হয়ে থাকবে।"

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

খুলনায় ছাত্র-জনতার উচ্ছ্বাস, বুলডোজারের আঘাতে মাটিতে মিশে গেল ‘শেখ বাড়ি’
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতার ঢল, বুলডোজার ছাড়াই গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা
আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা
হাসিনার বিচারের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান
মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কোপালেন আ'লীগের কর্মিরা
খুব দ্রুতই জবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে: ছাত্রদল সভাপতি
বগুড়ায় ৫০ টাকা অফারে টি-শার্ট কিনতে গিয়ে হুলস্থুল কান্ড, নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী
নওগাঁ সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
মোহাম্মদপুরে বিড়াল হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা, তদন্তের নির্দেশ
চুয়াডাঙ্গায় সার কাণ্ডে বিএনপি ও যুবদলের ৫ নেতা বহিষ্কার
আজ বন্ধুর সাথে গোসল করার দিন
২ আলাদা বিভাগসহ দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস
হাসিনার লাইভ প্রচারের আগেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ উধাও
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা
বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবজিবাহী পিকআপ খাদে, চালকসহ নিহত ৩
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে জনগনের মতামত চাইলো হাসনাত  
এই ফটো তোলোস কেন? আদালত চত্বরে শাহজাহান ওমর  
মনে হচ্ছে বিবিসি বাংলা গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার ভক্ত : প্রেস সচিব