বিয়ের আগের মানসিক প্রস্তুতি
বিয়ে মানেই জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। একটা সময় ছিল যখন বিয়ে ছেলেমেয়েদের কাছে কানিকটা ভয়, আতঙ্ক ও বিষাদের ছিল। নতুন পরিবেশে নতুন মানুষের সঙ্গে কেমন কাটবে বা তারা কীভাবে গ্রহণ করবে তাকে- এসব নিয়ে খানিকটা মানিসক চাপ তো থাকতই। তবে এখন সময় পাল্টেছে। নেই ভয়ভীতি বা কোনো শঙ্কা। বিয়ে নিয়ে নানা পরিকল্পনা থাকে ছেলেমেয়ে উভয়েরই। তবে মানসিক চাপ একটু হলেও থাকেই। বিয়ের আগে মানসিক চাপ কমানোর উপায়গুলো জেনে নিই।
বর-কনের প্রস্তুতি
বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা বাড়ি যেন উৎসবের আমেজে মেতে ওঠে। হবু বর-কনেও ব্যস্ত হয়ে যান কেনাকাটা নিয়ে। চলে নানা ধরনের পরিকল্পনা, মঞ্চ কীভাবে সাজানো হবে, নিজের সাজগোছ কোথায় কী স্টাইলে হবে, কীভাবে চুল বাঁধা হবে বা চুরের ছাঁট কেমন হবে। কনের ক্ষেত্রে গহণা,শাড়ি, প্রসাধন পছন্দ করার ব্যাপার- এসব চিন্তা খুবই স্বাভাবিক। অফিস বা পড়াশুনা সামলে টুকটাক করে সবই গুছিয়ে নিতে হয়। ছেলেদের বিয়ের পোশাক, চুলের ছাট, জুতা-ঘড়ি কেমন হবে এসব চিন্তা থাকেই। কম-বেশি সব ছেলেমেয়েই এসবের মুখোমুখি হয়। এত আনন্দের মাঝেও মনটা হুট করেই খারাপ হয়ে যায়। একটু স্নায়বিক দুর্বলতা কাজ করে। মনে হয় সবকিছু ঠিকঠাক মতো হবে তো! নতুন পরিবেশে গিয়ে মানিয়ে নিতে পারবে তো! হবু দম্পতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিয়ের আগে মানসিক চাপ কমানোর উপায়
বিভিন্ন কারণেই এ সময় মানিসক চাপ অনুভব হতে পারে। জীবনসঙ্গী সমমনা হবে কি না, শশুরবাড়ির লোকজন কেমন হবে, নিজেকে ঠিকঠাকভাবে উপস্থাপন করতে পারবে কি না, নতুন সংসার কীভাবে সাজবে- এ ধরনের অনেক চিন্তাই এ সময় মাথায় ঘুরপাক খায়। দীর্ঘদিনের চেনা-জানা হোক বা পারিবারিক পছন্দের বিয়ে হোক, মানসিক চাপ কম-বেশি থাকেই। এ সময় কী করলে একটু ভালো হবে আর মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, সেটা জেনে নিই।
নিজেকে হাসিখুশি রাখা
নিজের ভালো লাগার কাজ করতে হবে সব দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে! এ সময় সময় কাটাতে রূপচর্চা করতে পারেন। এতে কিন্তু দুই ধরনের লাভ আছে, আপনার চাপ কিছুটা হলেও কমবে, সেই সঙ্গে ত্বক ও চুলও সুন্দর হবে। বাসায় বসে খুব সহজেই ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়া যায়।
কাজের ফাঁকে বিরতি নিন
বিয়ের আগে নানা ধরনের প্রস্তুতি থাকে। যখনই চাপ অনুভব করবেন, কিছুক্ষণের জন্য কাজ থেকে বিরতি নিন। কফি বা চা নিয়ে বারান্দায় বসুন, প্রিয় বন্ধু কিংবা হবু জীবনসঙ্গীকে ফোন দিয়ে কথা বলুন, অথবা একান্তে নিজে নিজেই সময় কাটান। পছন্দের গান শুনুন। দেখবেন মানসিক চাপ উধাও! সংগীত মানসিক অস্থিরতা কমাতে অনেকটাই সাহায্য করে।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান
নতুন একটি পরিবেশে যেতে হবে, নতুন পরিবারের সদস্যরা কেমন হবে, বিয়ের আগে এই বিষয়গুলো নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না। আগে নিজ পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। বাসায় বসে চাপ অনুভব হলে সবাইকে নিয়ে বাইরে কোথাও খেতে যান, একসঙ্গে বসে বিয়ের পরিকল্পনা করুন, দায়িত্বগুলো ভাগ করে দিন। দেখবেন এই ধরনের পারিবারিক আলোচনা আপনার মানসিক চাপ অনেকটাই কমিয়ে দেবে, আপনি শান্তি অনুভব করবেন।
সময়মতো ঘুমিয়ে পড়ুন
ঘুম হচ্ছে সুস্থতার চাবিকাঠি। রাত জাগলে আপনার অস্থিরতা আরও বাড়বে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে সব ধরনের যন্ত্র থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন, পারলে এক গ্লাস দুধ পান করুন। রোজমেরি তেল চাপ থেকে মুক্তি দিয়ে মানসিক প্রশান্তি আনতে দারুণ কাজ করে। নারকেল তেলের সঙ্গে ২/৩ ফোঁটা রোজমেরি তেল মিশিয়ে মাথার খুলিতে মালিশ করুন। এতে কিন্তু ঘুমও ভালো হয়।
বন্ধুদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে ফেলুন
কাছের বন্ধুদের নিয়ে খোলামেলা পরিবেশে বেড়িয়ে আসতে পারেন। মন খুলে গল্প করুন। তাদের সঙ্গে গায়ে হলুদ, মেহেদি সন্ধ্যা, বিয়ে নিয়ে পরিকল্পনা করুন। এ সময়টুকু পুরোপুরিভাবে উপভোগ করার চেষ্টা করুন, এতে আপনার চাপ অনেকটাই কমে যাবে। সবচেয়ে ভালো হয়, ভাইবোন আর বন্ধুদের নিয়ে যদি একসঙ্গে বসলে। বেশ ভালোভাবে তাহলে এসব পরিকল্পনা করে নিতে পারবেন। আর মানসিকভাবে আপনিও নিশ্চিন্ত ও প্রফুল্ল থাকবেন।
এসএন