বেক্সিমকো, কনফিডেন্স ও দারাজ জাগোর সঙ্গে ১০ লাখ মাস্ক বিলালো
সাকিব হাসান শুভ
‘জাগো ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশের গরীব মানুষদের সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তরুণ-তরুণীদের একটি সামাজিক আন্দোলন। যাকাত কাযক্রম, বিনামূল্যে শিক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাটি দ্রারিদ্রতার দুষ্ট চক্র ভেঙে দিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
তারা অন্যান্য বেসরকারী উন্নয়ন ও সামাজিক সংস্থাগুলোর মতো কাজ করছেন ‘কোভিড-১৯’ রোগের বিপক্ষে। এই রোগের নতুন ধরণ অমিক্রনের আক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেশের সবাইকে মাস্ক পরার অপরিহার্যতা আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে-কার্যক্ষেত্রে দারুণভাবে খেয়াল করেছেন। ফলে এই মাসের ২৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি ফাউন্ডেশনটির স্বেচ্ছাসেবীদের প্লাটফর্ম ‘ভলান্টিয়ার্স ফর বাংলাদেশ’ এক বিশেষ সামাজিক উদ্যোগ সম্পন্ন করেছে।
তিন দিনে ‘ভলান্টিয়ার্স ফর বাংলাদেশ’ সারা বাংলাদেশ জুড়ে ব্যস্ত রাজপথ, গণ-পরিবহন, ওভার ব্রিজ, বাস স্টপেজসহ বেশি জনসমাগম হয় এমন স্পটগুলোতে ১০ লাখ সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছেছেন। কোভিড-১৯ মহামারি রোগের হাত থেকে বাঁচার যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা ‘আপনার মাস্ক কোথায়?’ কাযক্রমটি সম্পন্ন করেছেন সফলভাবে।
৩১ জানুয়ারি ১০ লাখ মাস্ক বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় বিতরণ ও সঠিকভাবে পরা এবং ‘কোভিড-১৯’ মহামারি রোগটির হাত থেকে বাঁচতে কী, কী করতে হবে-বারবার মনে করিয়ে দিয়ে তাদের সচেতনতার প্রচারাভিযানটি সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন ফাউন্ডেশনের সিনিয়র কমিউনিকেশন ম্যানেজার তানভীর মুযাদ্দিদ।
তিনি বলেছেন, “আমাদের দীর্ঘ শ্রমের বিনিময়ে করা এই প্রচারাভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল, সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘কোভিড-১৯’ রোগের বিষয়ে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলা। দুই বছর ধরে তারা যে সংগ্রাম করে চলেছেন মহামারি এই রোগটির বিপক্ষে বিশ্বজুড়ে, আমাদের বাংলাদেশেও সেটিকে এই পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থাগুলোর পাশাপাশি জাগো ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রয়োগে নিয়ে আসা। আমরা কেবল সামাজিক ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং সচেতনতাই বাড়িয়ে তুলিনি, মহামারি রোগটির নতুন ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য, বাঁচার তাগিদে মাস্ক পরতে মানুষের আচরণগত উন্নতিতে কাজ করেছি।”
তানভীর মুযাদ্দিদ জানিয়েছেন, পারম্পরিক অংশীদারিত্বের এই কাযক্রমে জাগোকে সাহায্য করেছেন সিএসআর খাতে কটি বিখ্যাত বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান-‘বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড’, ‘কনফিডেন্স’ গ্রুপ ও , অনলাইন শপিং প্রতিষ্ঠান ‘দারাজ’ ।
তিনি জানিয়েছেন, শেষ দিনে রাজধানী ঢাকার গুলশান-২, বনানী-১১, মহাখালীর ‘কাকলী’, ‘কারওয়ান বাজার’ ও ‘ধানমন্ডি’র মতো উন্নত এলাকাগুলোর ব্যস্ত সড়কগুলোতে ‘আপনার মাস্ক কোথায়?’ কার্যক্রমটি সম্পন্ন করা হয়েছে।
তানভীর মুযাদ্দিদ বলেছেন, ‘অন্যান্য বারের চেয়ে এই আয়োজনের পার্থক্য ও ভালো দিক এই ছিল যে, আমাদের তরুণ, তরুণী স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে দারাজ, কনফিডেন্স ও বেক্সিমকোর কর্মকতা ও কর্মচারীরা অংশ নিয়েছেন।’
তিনি জানিয়েছেন, ‘সেখানে তারা অনেক কাজ করেছেন এবং আমাদের কাজগুলোর উচ্চ কন্ঠে প্রশংসা করেছেন।’
জাগো ফাউন্ডেশন বলেছে, স্বেচ্ছাসেবকরা ঢাকার বিভিন্ন মসজিদেও শেষ দিনে এবং সবসময় সাধারণ পথচলতি এবং গরীব মানুষদের মধ্যে মাস্ক বিলিয়েছেন। তাদের করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে নিজেকে ও পরিবারকে বাঁচাতে অনুরোধ করে উপায়গুলো বলেছেন।
এই বিষয়ে দারাজ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের প্রধান বিপনন কর্মকতা তাজদিন হাসান বলেছেন, ‘আমরা কাজে খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জড়িয়েছি এই কারণে যে, আমাদের ব্রান্ডের মূল উদ্দেশ্য হলো, অনলাইনে বাণিজ্যের শক্তিকে ব্যবহার করে স্থানীয়দের উন্নয়ন ঘটানো, তাদের কাছে আধুনিক পণ্য ও সেবাগুলোকে পৌঁছে দেওয়া এবং তরুণ, তরুণীদের কাজের ব্যবস্থা করা।’
তিনি বলেছেন, “তবে এই মুহূতে কোভিড-১৯ মহামারি রোগের অমিক্রন ভাইরাসে বিশ্বের লাখ, লাখ মানুষ আক্রান্ত। তাতে অনলাইনে ব্যবসা করা আমরাও ক্ষতিগ্রস্থ। প্রায় সর্বত্র রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে, ফলে উদ্বেগপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে আবারও চলে যাচ্ছি সবখানে সবাই। তাতে বাঁচতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। আমরা ‘ভলান্টিয়ার্স ফর বাংলাদেশ'কে সার্বিকভাবে সহযোগিতাই শুধু নয়, নিজেরাও অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের সমাজগুলোকে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি। আমরাও মাস্ক দিয়েছি, নিজেরা কাজ করেছি। এভাবে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা বজায় রাখতে অংশীদার হয়েছি।"
কনফিডেন্স গ্রুপের আয়োডিনযুক্ত লবনসহ আরো ভালো, ভালো সামাজিক উদ্যোগ আছে বাংলাদেশে। তাদের বোর্ড মেম্বারাও এই মহৎ কাজে যোগ দিতে পেরে খুশি, “আমরা মনে করি ‘কোভিড-১৯’ মহামারির বিরুদ্ধে লড়ার এ এক সাশ্রয়ী ও সেরা সমাধান। মৌলিক কোভিড বিরোধী প্রটোকল অনুসরণ করে গত ২ বছর ধরে ১ শতাংশেরও কম সংক্রামণে আমাদের কর্মীদের নিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এই সময়াবলীর মধ্যে আমরা যে ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করেছি, মাস্ক পরা অন্যতম। ভলান্টিয়ার্স ফর বাংলাদেশ এবং অন্যদের সঙ্গে থেকে আমরা আমাদের ব্যবসার সামাজিক অঙ্গীকারও পূরণ করতে পেরেছি।”
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা বলেছেন “কোভিড-১৯’ রোগের হাত থেকে সবাইকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। মাস্ক ভাইরাসটির সংক্রমণ বন্ধ করতে পারে। জীবন বাঁচাতে পারে। তাই আমরা তাদের সহযাত্রী হয়েছি।"
জাগো সূত্রে জানানো হয়েছে, এই কার্যক্রমটিও এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস বা টেকসই উন্নয়ন)’র লক্ষমাত্রাগুলো অর্জনে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনার জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং তার সরকারের ‘বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১’ পূরণ করতে এভাবেও তরুণ-তরুণীদের উৎসাহী, সক্রিয় অংশগ্রহণ হচ্ছে। তাতে বিশ্বে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
মূল প্রতিষ্ঠান জাগো ফাউন্ডেশনের প্রধান করভি রাকসান্দ সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, “করোনাভাইরাস আরো অনেক দিন থাকতে পারে। আমাদের কাছের, দূরের ও প্রিয়জন-সবাইকে নিরাপদ, সুস্থ রাখতে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করাই ভালো। প্রত্যেককে মাস্ক পরতে, হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে ও ভিড় এড়াতে আমি আবার অনুরোধ করছি।’
ওএস।