ফ্রোজেন ফুড কি স্বাস্থ্যকর?
ছবি সংগৃহিত
রোজকার ঘোড়দৌড়ের মাঝে বাজার করা, রান্নার সময় যেন ক্রমশ কমে আসছে। অনেক পরিবারেই স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কর্মরত। ফলে অনেক সময়েই ভরসা ফ্রোজ়েন ফুড। স্ন্যাকস, মাংস থেকে শুরু করে কড়াইশুঁটি, আগে থেকে কেটে রাখা আনাজও কিনে রাখেন অনেকে। কিন্তু অনেকের আবার ধারণা দীর্ঘ দিন ফ্রোজ়েন ফুড খেলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে কঠিন রোগবালাই। পুষ্টিবিদরা কী বলছেন, জেনে নেওয়া যাক—
ফ্রোজ়েন ফুড কি ক্ষতিকর?
ফ্রোজ়েন ফুড মানুষের কাছে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার খাবার সহজপ্রাপ্য করে তুলেছে। কলকাতায় বসেই বেরির স্বাদ, বারো মাস কড়াইশুঁটি, ভুট্টার স্বাদ পাচ্ছেন মানুষ। কিন্তু তা কি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর? ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট হিনা নাফিস বললেন, ‘‘কী ভাবে প্রিজ়ার্ভ করা হচ্ছে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সংস্থাই প্রিজ়ারভেটিভ বা অ্যাডিটিভস ব্যবহার করে না। আবার প্রিজ়ারভেশনের সময়ে পুষ্টিগুণ কিছুমাত্রায় নষ্ট হয়ে গেলে তা সংযোজনও করা হয়। সে দিক দিয়ে দেখলে ফ্রোজ়েন ফুড কিন্তু খারাপ নয়। তাজা আনাজপাতির সঙ্গে তুলনা করলে ফ্রোজ়েন ফুড পিছিয়ে থাকবে। কিন্তু ধরুন আপনার স্থানীয় বাজারে বেরি পাওয়া যায় না। সেখানে ফ্রোজ়েন বেরি খেলে তার স্বাদ, পুষ্টি তো পাবেন। তা হলে সে ক্ষেত্রে ফ্রোজ়েন ফুড খাওয়া যেতেই পারে।’’ তবে ভিটামিন কিছু ক্ষেত্রে যে সংরক্ষণ পদ্ধতিতে নষ্ট হয়, সে সম্পর্কে সচেতন করলেন হিনা। তাঁর কথায়, ‘‘সংরক্ষণ করার আগে কড়াইশুঁটি বা কিছু আনাজ ব্লাঞ্চ করা হয়। তাপমাত্রায় কিছুটা ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই খাওয়ার আগে একটু পাতিলেবুর রস দিয়ে ব্যালান্স করে নিতে পারেন।’’
পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরীও এ বিষয়ে সহমত। তিনি বলছেন, ‘‘যে ভাবে তা প্রিজ়ার্ভ করা হয়, তাতে এর মধ্যে ব্যাকটিরিয়ার গ্রোথ হতে পারে না। তবে ফ্রোজ়েন ফুড কিনে বাড়িতেও সংরক্ষণ করতে হবে ডিপফ্রিজ়ে। তাপমাত্রা যেন সেখানে শূন্যের নীচে থাকে। বরফ জমার তাপমাত্রায় রাখতে হবে ফ্রোজ়েন ফুড। এত ঠান্ডায় ব্যাকটিরিয়ার বাড়বৃদ্ধি হয় না। ফলে যে আনাজ এমনিতে হয়তো দু’-তিন দিন ভাল থাকত, ফ্রোজ়েন ফুডের ক্ষেত্রে সেটিই সপ্তাহখানেক ভাল থাকে। তাই এই খাবার খেলেই যে শরীর খারাপ করবে বা ফুড পয়জ়নিং হবে, তা কিন্তু নয়। বরং ঠিক মতো সংরক্ষণ করতে পারলে ফ্রোজ়েন ফুডে ক্ষতি নেই।’’
পুষ্টিগুণ কতটা বজায় থাকে?
ডায়াটিশিয়ান প্রিয়া আগরওয়াল বললেন, ‘‘যেহেতু শূন্য ডিগ্রির নীচে স্টোর করা হয় খাবার, তাই পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করে খেলে যেমন খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়, ঠিক তেমনই এত নিম্ন তাপমাত্রায় তা স্টোর করলেও খাবারের পুষ্টিগুণ কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়।’’ যেমন ভিটামিন সি ও ডি-র ঘাটতি দেখা যায় ফ্রোজ়েন ফুডে। আর একটি বিষয়ে সতর্ক করে দিলেন সুবর্ণা, ‘‘কিছু ফ্রোজ়েন ফুডে সোডিয়াম একটু বেশি মাত্রায় ব্যবহার করা হয়। মুখে দিলে নোনতা স্বাদ পাওয়া যায়। তাই কার্ডিয়াক ও কিডনির রোগীদের ফ্রোজ়েন ফুড না দেওয়াই ভাল।’’
নিয়ম মানতে হবে
* ফ্রোজ়েন ফুড কেনা থেকে শুরু করে রান্না করার ক্ষেত্রেও কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এ ধরনের খাবার কেনার আগে অবশ্যই লেবেল দেখতে হবে। এক্সপায়ারি ডেট পার হয়ে গেলে তা কেনা চলবে না বা খাওয়া চলবে না।
* আইসক্রিমের ক্ষেত্রে এ কথা অনেকেরই মাথায় থাকে না। সুবর্ণা মনে করিয়ে দিলেন যে, ‘‘আইসক্রিম খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই লেবেল দেখেন না। কিন্তু প্যাকেটের গায়ে এক্সপায়ারি ডেট লেখা থাকে। বিশেষত পুজোর সময়ে হুটহাট অনেকেই আইসক্রিম কিনে খেতে শুরু করে দেন। ভিড়ের মধ্যে হয়তো দেখা সম্ভবও হয় না। কিন্তু সেখানেই ভুল হয়।’’ যেহেতু দুধ দিয়েই মূলত আইসক্রিম তৈরি হয় আর দুধ পচনশীল তাই আইসক্রিমের এক্সপায়ারি ডেট দেখে কিনুন।
* ফ্রোজ়েন ফুড রান্না করার আগে যেটুকু লাগবে, ঠিক সেটুকুই বার করুন। পুরো প্যাকেট ঘরের তাপমাত্রায় এনে অর্ধেক বার করে বাকি অর্ধেক আবার ফ্রিজ়ে পুরে রাখবেন না। এতে খাবার নষ্ট হয়। কারণ যে খাবারটা তুলে রাখলেন তাপমাত্রার পরিবর্তন হওয়ায় তা পচে যেতে পারে।
* ফ্রোজ়েন ফুড কেনার সময়ে লেবেলে দেখে নেবেন অ্যাডিটিভস বা প্রিজ়ারভেটিভ কিছু ব্যবহার করেছে কি না। কিছু অ্যাডিটিভসে যেমন কটু গন্ধ হয়, তেমন তা খাবারের ভিটামিন ও মিনারেল নষ্ট করে দেয়। তাই এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
* সিলড প্যাকেট খোলার আগে দেখে নিন, ক’দিনের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। কিছু খাবার সিল খোলার ১-৫ দিনের মধ্যে, কিছু খাবার ১ সপ্তাহের মধ্যে খেয়ে নিতে হয়। কিছু খাবার আরও বেশিদিন রাখা যায়। তাই অবশ্যই লেবেল ভাল করে পড়ে তার পরে খান।
আনাজপাতি বা মাছ, মাংস... সবই রোজ তাজা কিনে খেলেই সবচেয়ে ভাল। কিন্তু সে সুযোগ না থাকলে ফ্রোজ়েন ফুডও বুঝেশুনে খেতে পারেন। তবে তা যেন অভ্যেস হয়ে না দাঁড়ায়, খেয়াল রাখুন।