যখন তখন নাক খোঁটার অভ্যাসে হতে পারে মহাবিপদ
ছবি সংগৃহিত
নাকের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে খোঁটাখুঁটির অভ্যাস রয়েছে অনেকেরই। এটি দেখতে যেমন অসৌজন্যমূলক, তেমনি অস্বস্তিকর। কিন্তু যাদের নাক খোঁটার অভ্যাস, তারা এতকিছু মাথায় রাখেন না। তারা নিজের মনে নাক খুঁটতে থাকেন। এতে অন্যরা বিরক্ত হন তো বটেই, সেই সঙ্গে কিন্তু ক্ষতি হয় যিনি নাক খুঁটছেন, তারও। এ কথা কি কখনো ভেবে দেখেছেন?
আড়ালে কিংবা প্রকাশ্যে নাক খোঁটার অভ্যাস রয়েছে অনেকেরই। কখনও কোনও অস্বস্তির কারণে নাকে আঙুল দেন কেউ। আবার অনেক সময় অভ্যাসবসে আঙুল চলে যায় নাসিকা গহ্বরে। অন্যমনস্ক হয়ে স্থান-কাল খেয়ালও থাকে না। সকলের নজরে পরে গেলে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। অনেক বিখ্যাত মানুষের এমন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলার ছবি দেখা গিয়েছে। সেই তালিকায় বিলেতের রানি থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট অনেকেই রয়েছেন। আর ছোটদের ক্ষেত্রে তো এমন প্রবণতা প্রায় সকলেরই থাকে। আর সেই ‘বদভ্যাস’ ছাড়তে শাসন করা বড়দের অনেকের কাছেই নাকে আঙুল ঢোকানো আসলে মুদ্রাদোষ।
নাক খোঁটার বা বারবার নাকে আঙুল দেওয়ার অভ্যাস আছে অনেকেরই। এটি একটি বদঅভ্যাস আবার দৃষ্টিকটূও বটে। একই সঙ্গে আপনার এই বদঅভ্যাস কিন্তু ডেকে আনতে পারেন কঠিন বিপদ।
বিজ্ঞানীরা জনাচ্ছেন, নাকে আঙুল দেওয়ার এই অভ্যাসই নাকি মস্তিষ্কের কঠিন অসুখ ডেকে আনতে পারে। এমনটিই জানা গেছে এক গবেষণায়। যদিও এ বিষয় নিয়ে আগেও গবেষণা হয়েছে।
এই নিয়ে গবেষণার সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে এক ডজনে। এবার নতুন করে আবার সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় সব গবেষণারই ফলাফল কাছাকাছি। অর্থাৎ ঘন ঘন নাক খুঁটলে মস্তিষ্কের কঠিন রোগ হতে পারে। আর সেই রোগের নাম ডিমেনশিয়া। যা অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ নামেও পরিচিত।
ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তাতে দেখা গেছে, ডিমেনশিয়া রোগীদের মস্তিষ্কে একটি বিশেষ রকমের প্রোটিন বাসা বাঁধছে।‘টাও’ নামের ওই প্রোটিন কিছু প্যাথোজেনেসিসের মাধ্যমে শরীরে আসে। অর্থাৎ শরীরের বাইরে থেকে কোনো না কোনো জিনিসের সংস্পর্শে প্যাথোজেনের মাধ্যমে তা ব্রেনে ঢোকে।
আর এবার ব্রেনে ঢোকার সবচেয়ে সহজ পথ হলো নাক। বিজ্ঞানীদের দাবি, নাকই এর জন্য দায়ী। নাকের পথ দিয়েই সোজা মস্তিষ্কে পৌঁছে যাচ্ছে ওই প্যাথোজেন। ঘটাচ্ছে নিউরোইনফ্লেমেশন অর্থাৎ স্নায়ুর প্রদাহ। যা থেকে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
বেশিরভাগ মানুষই নাক খোঁটান ময়লা পরিষ্কারের জন্য। তবে নাক খোঁটার অভ্যাস যাদের আছে, তারা প্রায়ই ময়লা হাতে তা করেন। নাকে আঙুল দেওয়ার আগে বা পরে হাত ধুয়ে নেন না।
এতে প্যাথোজেন নাকের ভেতর দিয়ে সহজেই সংক্রমণ ছড়াতে পারে। মনে রাখা জরুরি, সংক্রমণ দু’ভাবে ছড়ায়। একটি হলো তলের মাধ্যমে, অন্যটি বায়ুর মাধ্যমে। তলের মাধ্যমে ছড়ানো সংক্রমণ ছোঁয়াচে হয়। আর সেই সংক্রমণই ডিমেনশিয়ার জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
জেনে নিন নাক খুঁটলে কী কী ক্ষতি হতে পারে–
বড় অসুখের ভয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন-তখন নাক খোঁটার অভ্যাস একদমই ভালো নয়। এটি শুধু দেখতেই খারাপ লাগে, তা নয়। বরং এই অভ্যাসের কারণে ডেকে আনতে পারেন বড় কোনো রোগ। আর এ কারণেই তারা নাকের ভেতরে আঙুল ঢুকিয়ে খোঁটাখুঁটি করতে নিষেধ করেন। আপনার যদি এই অভ্যাস থাকে তবে আজই বাদ দিন। নয়তো আপনার ছোট্ট অভ্যাসটি বড় কোনো অসুখের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আলঝাইমার্সের আশঙ্কা
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আলঝাইমার্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে অনেকের ক্ষেত্রে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত নাক খোঁটার অভ্যাস থাকলে বাড়তে পারে অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগের আশঙ্কা। তাই এ ধরনের রোগ থেকে বাঁচতে এই বদ অভ্যাস ত্যাগ করুন।
ব্যাকটেরিয়ার ভয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, নাক খোঁটার কারণে আমাদের নাকের ভিতরের টিস্যু (কলাকোষ) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ফলে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া নাকের ভেতর ঢুকে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। আর সেখান থেকেই তারা আক্রমণ করে আমাদের মস্তিষ্ককে। তাই এ ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে বাঁচতে নাক খোঁটার বদ অভ্যাস বাদ দিন।
নাকের ভেতরের ক্ষতি
বারবার আঙুল দিয়ে নাক খোঁচানোর ফলে নাকের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকের নখ থাকে বড়। নখের আঘাতে নাকে রক্তপাতের মতো ঘটনাও ঘটে। অনেক সময় অনেকে ইচ্ছে করেই নাক খোঁচান। নাকের পেশিতে ক্ষতি হলে তা বড় ঘাতে রূপ নিতে পারে।