শীতে শরীরে উষ্ণতা দেবে যেসব খাবার
ছবি সংগৃহিত
সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। চারদিকে বইছে হিমেল ও শুষ্ক হাওয়া। দেশে এখন হাড়কাঁপানো শীত। এ সময় শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ও উষ্ণ রাখতে গরম কাপড় ছাড়াও চাই বিশেষ পুষ্টিকর খাবার। চলুন জেনে নিই কোন কোন খাবার শীতকালে আপনার শরীর উষ্ণ রাখতে সাহায্য করবে-
মধু: এটি ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেটের (শর্করা) ঘন উৎস। মধুতে থাকা গ্লুকোজ থেকে সরাসরি অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট তথা এটিপি তৈরি হয়। এই বিপাক প্রক্রিয়ার সময়ই দেহের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। তাই শীতে গরম পানি, দুধ ও চায়ের সঙ্গে মধু ব্যবহার করতে পারেন।
ঘি: আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে ঘি দেহের তাপমাত্রা বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। ঘিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকে, যা বিপাকের সময় শরীরে অধিক তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে। কিন্তু যাঁদের রক্তে চর্বি বেশি, তাঁরা ঘি বেশি খাবেন না।
মসলা: দেহে তাপ তৈরিতে মসলার ভূমিকা রয়েছে। যেমন মরিচের ক্যাপসেসেন, আদার জিঞ্জারল, গোলমরিচের পিপারিন দেহকে উষ্ণ করে। মসলার এসব উপাদান জিবের রিসেপ্টরগুলো উদ্দীপিত করে, যা দেহে তাপ তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তাই শীতে চায়ে, রান্নায় এ মসলাগুলো ব্যবহার করা ভালো।
জিরা–পানি: জিরা দেহে রক্তের সঞ্চালন বাড়িয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য শরীর উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। তাই খাদ্যতালিকায় জিরা–পানি যোগ করতে পারেন।
স্যুপ: দেহ উষ্ণ রাখতে শীতের তাজা রঙিন সবজি, ডাল, বার্লি ও মুরগি দিয়ে স্যুপ খেতে পারেন। এতে আদা, রসুন, গোলমরিচ, চিলিফ্লেক্স ইত্যাদি যোগ করা যায়।
তিল ও শর্ষে: তিল ক্যালসিয়াম ও আয়রনে ভরপুর। গুড় দিয়ে লাড্ডু বা ভেজে তিল খেতে পারেন। শর্ষে দেহের থার্মোরেগুলেশন প্রক্রিয়া উদ্দীপিত করে। শর্ষে ভাঙার সময় মাইরোসিনেজ নামক এনজাইম সক্রিয় হয়, যা এলাইল-আইসোথিওসায়ানেট তৈরিতে সাহায্য করে। শর্ষের এ উপাদান দেহের তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
দুধ: এটি সরাসরি না বাড়ালেও পরোক্ষভাবে দেহ উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। গরম দুধে মধু বা ঘি মিশিয়ে, ডার্ক চকলেট বা কোকো পাউডার মিশিয়ে হট চকলেট তৈরি করে খেলে চমৎকার উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়বে। গরম বাটার মিল্কের সঙ্গে ড্রাইফ্রুটস মিশিয়ে খেলেও তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে।
ডার্ক-চকলেট: এতে কোকোয়া বাটার, কিছুটা ক্যাফেইন থাকে, যা দেহের তাপমাত্রা বাড়ায়। এর থিয়োব্রোমাইন নামক উপাদান রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেহ উষ্ণ করে। এ ছাড়াও ডার্ক-চকলেটের পিইএ নামক উপাদান মস্তিষ্কের নার্ভাস সিস্টেমের তাপ নিয়ন্ত্রণকারী অংশ উদ্দীপিত করে।
শুকনা ফল: শরীর গরম রাখতে বেশ কার্যকর শুকনা ফল (ড্রাই ফ্রুটস)। কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, খেজুর, কিশমিশ বা আখরোট ভালো ফ্যাটের বিশেষ উৎস। শীতপ্রধান দেশগুলোতে নাশতা হিসেবে এসব খাবার প্রাধান্য পায়।
মিষ্টি আলু: শীতকালের এই সবজিটিরও রয়েছে শীত দূর করার ক্ষমতা। ফাইবার, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন সমৃদ্ধ এই মিষ্টি আলুকে বলা হয় সুপারফুড যার রয়েছে দেহকে নানা ধরণের রোগ থেকে মুক্ত রাখার পাশাপাশি শীত তাড়ানোর বিশেষ ক্ষমতা।
মাংস: খাসি ও গরুর মাংস শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে তা বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।
সবুজ শাকসবজি: শীতকাল মানেই সবজি বাজারে রঙের পরশ! আর সেই রং যাতে আপনার খাবারের প্লেটেও লাগে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আর সেই কারণেই প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে গাজর, পালং শাক, বিনস, টমেটোসহ আরও নানা সব সবজিকে।
আদা চা: আদা আমাদের দেহের রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এতে করে আমাদের দেহের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ও শীত দূরে পালায়। এই আদা খালি না খেয়ে শীতকালে আদা চা তৈরি করে পান করলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়াও শীতকালীন সর্দি, ঠাণ্ডা, কাশি দূর করতেও আদা চায়ের জুড়ি নেই।
ডাল বা শস্যদানা: মূলত উচ্চমাত্রার প্রোটিনে সমৃদ্ধ এসব উদ্ভিজ খাবার দেহকে পর্যাপ্ত জ্বালানি দেয়। কাজেই এসব খাবার শীত তাড়াতে খুবই কাজের। মসুর, মুগ বা মাষকলাই, যাই খান না কেন, শীতে একটু বেশি করেই খাবেন। দেহে শক্তি থাকবে, তাপও হারাবে না।