ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর সুপারফুড পালং শাক
পালং শাক। ছবি: সংগৃহীত
শীতকাল মানেই নতুন শাক-সবজি। বাজারে গেলেই চোখে পড়বে বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি ফল-মূল। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো পালং শাক। এটি খেতে যেমন মজাদার তেমন কাজেও দারুণ।
পালং শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। ডায়েটে পালং শাক অন্তর্ভুক্ত করে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা এড়ানো যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পালং শাকে উপস্থিত আছে নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। তা শরীরকে ক্যানসারমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে প্রস্টেট ক্যানসার রোধে এই শাক খুবই কার্যকর।
আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে অন্যতম পালং শাক। পালং শাক এক প্রকার সপুষ্পক জাতীয় উদ্ভিদ। পালং শাকের বৈজ্ঞানিক নাম স্পিনেসিয়া ওলেরেসিয়া। পালং শাকের আদি নিবাস হচ্ছে মধ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়। আমাদের দেশে পালং শাকের বেশকিছু জাত দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো হলোঃ- পুষা জয়ন্তী, গ্রীন, সবুজবাংলা, কপি পালং, টকপালং , ব্যানার্জি জায়েন্ট, পুষ্প, নবেল জায়েন্ট। এছাড়াও আরো কিছু জাত দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো হলঃ- মালাবার পালং শাক, সেভয় পালংশাক, নিউজিল্যান্ড পালং শাক ইত্যাদি।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, এক কাপ পালং শাক শরীরের দৈনিক ফাইবার চাহিদার ২০% পূরণ করে। পাশাপাশি, ভিটামিন ‘এ ’ও ‘কে’-তে ভরপুর পালং শাক। পালং শাকে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘ই’, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ফলিক অ্যাসিড ও সেলেনিয়াম। একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্য এই উপাদানগুলো খুবই জরুরি।
পালং শাকে যে উপাদানগুলো পাওয়া যায় তা প্রধানত ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ক্লোরিন, ফসফরাস, আয়রন, খনিজ লবণ, প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। পালং শাক রান্না বা জুস করেও খাওয়া যায়। পালং শাক খেলে শরীরে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে, অনেক রোগ এড়ানো যায়।
পালং শাকে রয়েছে খুব কম পরিমাণ ক্যালরি। কাজেই যত ইচ্ছা খান, ওজন বাড়ার চিন্তা নেই। পালং শাকের ম্যাগনেসিয়াম যা ব্লাড প্রেশার কমায়। পালং শাক রক্তের শ্বেত কণিকার মাত্রা বজায় রাখে। ফলে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
পালং শাকে আছে উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এর উচ্চ মাত্রার বিটা ক্যারোটিন চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এতে ফলিক এসিড থাকায় তা হৃদ যন্ত্রের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে সক্ষম।
পালং শাকে আছে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন সি। এইগুলি রক্তাল্পতা দূর করে। প্রচুর পরিমাণে থাকা আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। এতে থাকা বেশি মাত্রার ভিটামিন এ লিম্ফোসাইট বা রক্তের শ্বেত কণিকার প্রয়োজনীয় মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও শক্তিশালী করে। বিভিন্ন সংক্রমণ রোগ থেকে রক্ষা করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রোটিন আছে ২.০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট আছে ২.৮ গ্রাম, আঁশ আছে ০.৭ গ্রাম, আয়রন ১১.২ মি. গ্রাম, ফসফরাস আছে ২০.৩ মি. গ্রাম, অ্যাসিড (নিকোটিনিক) ০.৫ মি. গ্রাম, রিবোফ্লোবিন থাকে .০৮ মি. গ্রাম, অক্সালিক অ্যাসিড থাকে ৬৫২ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মি. গ্রাম, পটাশিয়াম ২০৮ মি. গ্রা, ভিটামিন-এ আছে ৯৩০০ আই. ইউ, ভিটামিন সি ২৭ মি. গ্রা, থায়ামিন আছে .০৩ মি. গ্রা।
সালাদ, ডাল, তরকারি, ভাজি, স্যুপ, জুস নানাভাবে খাওয়া যায় এই শাক। উপকারী পালং শাক আমাদের ত্বক, চুল, হাড়সহ সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপকার করে। প্রতিদিন পালং শাক খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য নানা উপকার বয়ে আনে। তবে তা যেন অতিরিক্ত না হয়, খেতে হবে পরিমিত।