শীতে সোয়েটার পরে ঘুমানো কি ঠিক? যা বলছেন চিকিৎসক
ছবি সংগৃহিত
বাতাসে হালকা-মিষ্টি ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব, সূর্যের তাপ বেশ মনোরম, ঝকঝকে নীল আকাশ আর কমলালেবুর সুবাস... জানান দিচ্ছে শীত আসছে। প্রত্যেক বছরই আলমারি থেকে বেরিয়ে পুরোনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনে উলের সোয়েটার। কিন্তু শীত এল তো এবার শীত থেকে বাঁচার পালা। কিন্তু শীতের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে আবার শরীরের ক্ষতি করে ফেলবেন না যেন! প্রায়শই দেখা যায় যে, রাতে শুতে যাওয়ার সময় উলের পোশাক পরে ঘুমায়। কিন্তু এই ছোট অসাবধানতা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর একটি বড় বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে। ভাবছেন তো,এ আবার কি সব বলছি! তাহলে বেশি না ভেবে আজকের লেখাই পড়ুন।
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, শীতে সোয়েটার পরা ভালো হলেও এটি পরে ঘুমিয়ে যাওয়া উচিত নয়। এতে রক্তপ্রবাহ সংকুচিত হয়ে যায়। পশমের পোশাক পরে ঘুমালে শরীর উষ্ণ হলেও বিপরীতে রক্তচাপ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথশটসের সঙ্গে ভারতের নয়ডার ম্যাক্স মাল্টিস্পেশালিটি সেন্টারের কনসালটেন্ট-পেডিয়াট্রিক ডা. চারু কালরা কথা বলেছেন। এবার তাহলে তার ভাষ্য ও প্রতিবেদন অনুযায়ী সোয়েটার পরে ঘুমানোর ক্ষতিকর দিকগুলো জেনে নেয়া যাক।
রক্তচাপের সমস্যা
রাতে সোয়েটার পরে ঘুমানোর ফলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। এতে রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং মাথা ঘামতে পারে। ফলে অনেকের ঘুমের মধ্যে ব্যাঘাত ঘটে। আবার যাদের কার্ডিয়াক রোগের সমস্যা রয়েছে, তারা ঘুমানোর সময় আঁটসাঁট পশমের বা সোয়েটার পরলে বুক ভারী ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা অনুভব করতে পারেন।
উল থেকে অ্যালার্জি
আমাদের উল থেকে অ্যালার্জি হওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। উল হল প্রাকৃতিক তন্তু। যা ভেড়া এবং কিছু কিছু সময়ে ছাগলের গা থেকে নেওয়া হয়। উল থেকে তেল নিষ্কাশন এবং পরিষ্কার করবার জন্য রাসায়নিক ও উলে রঙ করবার জন্য স্বাভাবিক ডাই ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক ও ডাইয়ের মিশ্রণ ত্বকের সংস্পর্শে এলে অস্বস্তি হতে পারে। এর ফেল চুলকানি, ফুলে যাওয়া এবং চোখ লাল হয়ে যাওয়া। ফুসকুড়ি এবং আমবাতও হতে পারে।
শরীর থেকে তাপ ক্ষয়
রাতে সোয়েটার বা পশমের কাপড় পরে ঘুমালে শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ ক্ষয় হতে পারে। এতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং ফুসকুড়ি পড়ে। আর ছোটদের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শিশুদের গরমের পোশাক পরিয়ে ঘুম পাড়াবেন না
সর্দি,কাশি যেন না হয় সেজন্য রাতে অনেকেই শিশুদের উলের পোশাক পরিয়ে ঘুম পাড়ান। কিন্তু রাতে শিশুদের কোনো অবস্থাতেই ঘুম পাড়ানো যাবে না। কারণ ছোট শিশুরা রাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলে। সে সময় শীতের পোশাক পরলে সেটাও ভিজিয়ে ফেলবে। ফলে ভেজা কাপড়ে আরও বেশি সর্দি,কাশি বা জ্বরও হতে পারে।
হাঁপানি বাড়ায়
ডা. কালরা বলেছেন, উলের জামা-কাপড় ও সোয়েটারগুলোয় লিন্ট রয়েছে। যা আপনার হাঁপানির সমস্যা আড়ও বাড়াতে পারে। অ্যালার্জেনের সংস্পর্শতার জন্য শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে। এ জন্য এটি এড়িয়ে চলাই ভালো।
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ
রাতে সোয়েটার কিংবা মোজা পরেও ঘুমানো উচিত নয়। ঘাম থেকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এ জন্য ঘুমানোর আগে অবশ্যই সোয়েটার ও মোজা খুলে ফেলুন।
যদি ঠান্ডা তীব্র হয় তাহলে সবচেয়ে সেরা উপায় হলো প্রথমে সুতি বা রেশমের পোশাক পরা। তারপর উলের পোশাক পরা। কিন্তু সেটা করবেন খুব ঠান্ডা পড়লে। হালকা থেকে মাঝারি শীতে সুতির পোশাকের উপর উলের গরমজামাই যথেষ্ট।