আত্মপ্রেমিরা অন্যদের তুলনায় সুখী
আত্মপ্রেম বা নার্সিসিজম শব্দের অর্থ হলো নিজের প্রতি নিজেই মুগ্ধ হয়ে থাকা এবং অন্য কারও প্রতি কোনো কিছুতেই মনোযোগ না দেওয়া, যা নেতিবাচক বটে।
সাইকোপ্যাথি, ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজম এবং স্যাডিজমের পরে নার্সিসিজমকেই মনোবিদরা মানুষের মানসিক দিকের সবচেয়ে 'কালো বৈশিষ্ট্য' বা 'ডার্ক ট্রেইটস' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
নার্সিসিজম নিয়ে গ্রিক মিথলজির গল্পটিও অনেকেরই জানা। গ্রীক মিথে নার্সিসাস নামে এক সুদর্শন যুবকেরক কথা বলা হয়েছে। ইকো নামের এক দেবী তাকে প্রেম নিবেদন করেন। কিন্তু সে তা প্রত্যাখ্যান করেন। ইকো তখন তাকে অভিশাপ দেয়, 'সে তার নিজের রূপের দেমাগে নিজেই কাবু হবে।'
সত্যি তাই হয়। একদিন সে পানি খেতে যায় পুকুরে। পানিতে নিজের ছায়া দেখে নিজের প্রেমে নিজেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দিনের পর দিন। আর এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেয়। সে মারা যায়। কালের পরিক্রমায় সেটা অত্যধিক স্বার্থপরতার একটা প্রতিশব্দ হিসেবে পরিণত হয়।
নিজের গুরুত্ব নিয়ে আত্মপ্রেমি বা নার্সিসিস্টদের মধ্যে বিশাল ভ্রান্ত ধারণা থাকে এবং তাদের মধ্যে লজ্জাও কিছুটা কম থাকে।
কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, বেশিরভাগ মানুষের তুলনায় তারা বেশি সুখী। কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্টে এক গবেষণা বলছে, এ ধরণের মানুষ অনেকের বদমেজাজের কারণ হলেও এরা নিজেরা মানসিক চাপে কম ভোগেন।
নার্সিসিস্টরা এমন মানুষ, যারা বিপজ্জনক আচরণ করে, নিজেদেরকে অযথাই অন্যের তুলনায় বড় মনে করে, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী, অন্যের প্রতি খুব কম সহানুভূতি দেখায় এবং এদের লজ্জা এবং অপরাধবোধ খুব কম কাজ করে।
তাদের মানসিক চাপ কম থাকে এবং তারা জীবনকে চাপযুক্ত মনে করে না। আর এক্ষেত্রে তাদের আত্মবিশ্বাস এবং আত্মগুরুত্বের উচ্চমাত্রা তাদের মধ্যে এক ধরণের 'সুরক্ষা' প্রদানকারী গুণের বিকাশ ঘটায়।
বেলফাস্ট টিমের আগের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, পেশাগত এবং সামাজিক জীবনে নার্সিসিস্টদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। নিজেদের 'মানসিক দৃঢ়তা' তাদেরকে প্রত্যাখ্যান এবং হতাশা মোকাবেলায় সাহায্য করে।
নার্সিসিস্টদের মধ্যে যারা 'বাগাড়ম্বরপূর্ণ' স্বভাব থাকে তারা 'স্ট্যাটাস এবং ক্ষমতা নিয়ে মগ্ন থাকে' এবং তাদের মধ্যে নিজেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভাবার বোধ কাজ করে।
তবে দুর্বল নার্সিসিস্টদের মধ্যে এক ধরণের রক্ষণাত্মক বা প্রতিরক্ষামূলক আচরণ থাকে এবং এরা অন্যের আচরণকে বিরূপ বা শত্রুভাবাপন্ন মনে করে।
এই ধরনের মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে ভাল বা খারাপ হিসাবে বর্ণনা না করে, বরং স্বভাবের বিবর্তন এবং প্রকাশের ফল হিসেবে দেখা যেতে পারে যা পরিস্থিতি অনুসারে সহায়ক বা ক্ষতিকর হতে পারে বলছে বেলফাস্ট টিম।
এ বিষয়ে আরও গবেষণা হয়তো এ ধরণের আরও কিছু বৈশিষ্ট্যকে সামনে নিয়ে আসবে। তবে সবার মঙ্গলের উদ্দেশ্যে আচরণের এ ধরণের বৈশিষ্ট্যকে নিরুৎসাহিতই করা হয়।
কেএফ/