চুল পড়া রোধে করণীয়
প্রতিদিন চুল উঠা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন একশ’টা চুল পড়া স্বাভাবিক। তাই চুল পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। চুল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মাথায় নতুন চুলও গজায়। তবে আবহাওয়া, পানি, ধুলোবালির কারণেও অনেক সময় চুল অকালেই ঝরে যায়। এমনও দেখা যায়, বয়স ৩০ ছুয়েছে কী ছোঁয়নি, মাথার মাঝখানটা ফাঁকা হয়ে গেছে। আবার মাথার দুই পাশ থেকে চুল উঠে গেছে অল্প বয়সেই। বয়স যেমনই হোক না কেন, কারোই ভালো লাগে না টাক হয়ে যেতে। চুল পড়ার হার যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখনই টাকা পড়া শুরু করে। চুল পড়া বা টাক সমস্যা রোধের কিছু উপায় হচ্ছে, খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
চুল পড়া রোধে যা করবেন:
চিকিৎসকের পরামর্শ
স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চুল পড়লে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ার আগে বেশি দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। আপনি কোন কোন ওষুধ সেবন করেন, চুলের জন্য কোন প্রসাধনী ব্যবহার করেন এবং চুল বিষয়ে আপনার পারিবারিক ইতিহাস এক্ষেত্রে জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় যে, আপনি যেসকল ওষুধ সেবন করছেন তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব বিষয় পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞ যে পরামর্শ দেন তা পালন করতে।
ওষুধ
চুল পড়া প্রতিরোধের জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রয়েছে। মিনোক্সিডিল বা রোগেইন এর মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। চুল পড়া প্রতিরোধ ও পুনরায় চুল গজানোর জন্য রোগেইন বেশ কার্যকরী ওষুধ। রোগেইন হচ্ছে ফেনা তৈরিকারী এক ধরনের ওষুধ যা দিনে দুই বার আপনি সরাসরি মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। মাথার পেছন এবং সামনের অংশে চুল গজানোর জন্য এটি বেশ কার্যকরী। আরেকটি কার্যকরী ওষুধ হচ্ছে, ফিনাস্টেরাইড বা প্রপেশিয়া। এটি মুখে খাওয়ার উপযোগী এবং প্রতিদিন তা সেবন করা যেতে পারে। এ দুটি ওষুধ অনেকসময় পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চুলের স্টাইল
চুল পড়ার জন্য অনেকটাই দায়ী চুল বাঁধার স্টাইল। চুলে আঁটসাঁট স্টাইল করলে শক্ত টানের ফলে চুলের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চুল পড়া শুরু হয়। তা ছাড়া চুলের গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে সেখানে আর চুল গজায় না। আপনি যদি চুলের আঁটসাঁট স্টাইল ধরেই রাখেন তাহলে আপনার মাথায় টাক পড়া ঠেকানো মুশকিল হয়ে পড়বে।
খাবার নির্বাচন
সুস্থ ও ঘন চুলের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের কোনো বিকল্প নেই। চুলের বৃদ্ধির জন্য আমিষ খুবই প্রয়োজনীয়। তবে চুলের পাশাপাশি শরীরের খেয়াল রাখতে হলে অবশ্যই চর্বিহীন আমিষ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। মাছে প্রচুর পরিমাণ চর্বিহীন আমিষ থাকে। চর্বিহীন মাংস মানবদেহের আমিষের চাহিদা পূরণ করে থাকে। বাদাম পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ভোজ্য বীজে প্রচুর ভিটামিন ই এবং স্বাস্থ্যকর স্নেহ পদার্থ থাকে যা চুলে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা ও পুষ্টি যোগায়। এমনকি কিছু মশলা চুলের পক্ষে খুবই উপকারী, যেমন- দারুচিনি। বিভিন্ন খাবারে দারুচিনি ব্যবহারের মাধ্যমে চুলের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব।
পর্যাপ্ত পানি পান
চুলের ২৫ শতাংশ গ্রন্থি পানি দিয়ে গঠিত। দেহে পানির অভাব দেখা দিলে চুলের গ্রন্থিগুলো দুর্বল হয়ে যায়। ফলে চুলের ঘনত্ব কমে যায় এবং চুল পড়া শুরু হয়। এ ছাড়া দেহে পানির অভাব দেখা দিলে নতুন চুলগ্রন্থি তৈরি হয় না ফলে মাথায় চুলের পরিমাণ বাড়ে না।
ভিটামিন সেবন
মানসিক চাপ, জিনগত সমস্যা ও বিভিন্ন রোগ ছাড়াও পুরুষদেহে ভিটামিনের অভাবে চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। মাথায় টাক পড়া প্রতিরোধ করতে পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন নিয়মিত গ্রহণ করুন। ভিটামিন এ আপনার চুলের গ্রন্থিতে রেটিনয়িক এসিডের সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ঘটাতে সাহায্য করে, ভিটামিন বি আপনার মানসিক চাপের মাত্রা কমিয়ে দেয়, ভিটামিন সি, ডি এবং ই আপনার দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সংরক্ষণ করতে সহায়তা করে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
চুল পড়া নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ যে কোনো বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করলেই চুল পড়ার হার বেড়ে যায়। দুশ্চিন্তা করলে আপনাআপনি চুল ঝরে যায়। এ ছাড়া বারবার চুল টানার ইচ্ছা জাগে। ফলে মাথা থেকে প্রচুর পরিমাণে চুল পড়ে যায় এবং চুলের গ্রন্থিগুলো আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার আক্রমণের শিকার হয়। সুতরাং মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা এড়াতে নিয়মিত বিভিন্ন শারীরিক ব্যায়াম করুন।
ধূমপান ও মদপান কমানো
অতিরিক্ত ধূমপান ও মদপানের ফলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এগুলোরও প্রভাব পড়ে চুলের ওপর। গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান ও মদপান চুল পড়ার জন্য দায়ী। ধূমপানের ফলে শরীরের রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। ফলে চুলের গ্রন্থিগুলোতে সঠিক মাত্রায় রক্তপ্রবাহ না থাকায় চুল পড়া শুরু হয়। অন্যদিকে মদপানের ফলে শরীরে পানিশূন্যতা ও নানানরকম পুষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। ফলে চুল পড়ার হার বেড়ে যায়।
নিয়মিত ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি চুলের জন্যও উপকারী। ব্যায়ামের ফলে মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা দূরে থাকে এবং শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ায়, যা চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে।
এসএন