স্মার্টফোনে আসক্তি
দুর্বল মস্তিষ্কে স্মৃতিবিলোপ হতে পারে
স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলা এখন আর বার্ধক্যের লক্ষণ নয়। বরং নবীনদের মধ্যেও এখন অতিমাত্রায় এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মত, এই অকাল স্মৃতিভ্রংশের পিছনে অনেকাংশে দায়ী স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি। তাই এই স্মৃতিনাশকে বলা হচ্ছে ‘ডিজিটাল অ্যামনেসিয়া’।
প্রাথমিক ভাবে এই ‘ডিজিটাল অ্যামনেসিয়া’ হল এমন এক ঘটনা যেখানে অতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভরতার জন্য আমাদের মস্তিষ্ক তার স্মৃতি ধরে রাখার কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ কৌস্তুভ মহাজন বলেছেন, স্মার্টফোন-আসক্তির কারণে পুরনো তথ্য মনে রাখা এবং নতুন স্মৃতি গঠনের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ভূমিকা বিঘ্নিত হতে পারে। স্মার্টফোনের নেশায় ব্যাহত হতে পারে সুনিদ্রার অভ্যাসও।
সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ঘুমের গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, গভীর ঘুম আমাদের মস্তিষ্ক ডিটক্সিফাই করে৷ তার ফলে মস্তিষ্ক ব্যস্ত থাকে ‘সাইন্যাপটিক প্রুনিং’-এর কাজে৷ পুরনো স্মৃতি মুছে নতুন তথ্যের জন্য জায়গা নির্মাণকেই বলা হয় ‘সাইন্যাপটিক প্রুনিং’। ঘুমের চক্র ব্যাহত হলে ‘সাইন্যাপটিক প্রুনিং’-ও বিঘ্নিত হয়। ফলে পুরনো স্মৃতির জায়গায় নতুন তথ্য জায়গা পায় না।
অতিমারি আবহে লকডাউন এবং ওয়ার্ক ফ্রম হোম এক ধাক্কায় কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ডিজিটাল অ্যামনেসিয়া। চিকিৎসকদের মতে, বাইরে দৌড়ঝাঁপ, মুখোমুখি কথার বদলে সকলে এখন ঘরবন্দি৷ অন্তহীন মিটিং এবং প্রজেক্টের জন্য তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে স্ক্রিনের দিকে।
এ ছাড়া আরও কিছু কারণ এর পিছনে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি, ঘুম এবং যন্ত্রণা কমানোর বিভিন্ন ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খেলেও স্মৃতিবিনাশ ঘটতে পারে৷ অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, তামাকের প্রতি আসক্তি এবং মাদকের উপর নির্ভরতাও কারওর স্মৃতিলোপের পিছনে খলনায়ক হতে পারে।
কী করে নিয়ন্ত্রণ করব ডিজিটাল অ্যামনেসিয়া
একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা-
- ঘুমোতে যাওয়ার সময় বিছানায় মোবাইল ফোন নিয়ে যাবেন না
- ঘুমনোর কিছুক্ষণ আগে অবধি মোবাইলে সামাজিক মাধ্যমের সব নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখুন
- অপ্রয়োজনীয় সব অ্যাপ স্মার্টফোন থেকে সরিয়ে দিন
- সপ্তাহে এক দিন রাখুন স্ক্রিন-ফ্রি ডে হিসেবে৷ সেদিন মোবাইল ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের স্ক্রিন থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন
- ফোনে কথা বলার সময় হেডফোন বা লাউডস্পিকার ব্যবহার করুন৷ যখন নেটওয়ার্ক খারাপ থাকে, সে সময় হেডফোন ও লাউস্পিকার কাজে লাগান৷
স্বাস্থ্যকর খাওয়া-
পুষ্টিকর খাওয়া, বিশেষ করে প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও ফ্যাট ডায়েটে থাকা প্রয়োজনীয়৷ মস্তিষ্কের সঠিক কর্মপদ্ধতির জন্য এই উপদানগুলি প্রয়োজনীয়। ভিটামিন বি-১ ও বি-১২ স্মৃতিশক্তি তরতাজা রাখার জন্য কার্যকর।
- ব্যালেন্সড ডায়েট খান
- নতুন নতুন কাজ রপ্ত করুন, নতুন ভাষা শিখুন
- হাঁটা, অ্যারোবিক্স, দৌড়নর মতো শারীরিক অনুশীলন বজায় রাখুন
- রাতে পর্যাপ্ত ঘুমোন