খাবার নিয়ে প্রচলিত যত ভুল ধারণা
কিছু খাবার নিয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ও অযৌক্তিক ধারণা রয়েছে। শুধু গ্রামে নয়, শহুরে অনেক শিক্ষিত মানুষও এসব ভুলগুলো মেনে চলেন। প্রচলিত এমন কিছু ধ্যানধারণা বা সংস্কারের যৌক্তিকতা নিয়ে কিছু কথা-
আনারস ও দুধ একত্রে খেলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে
এটি একেবারেই ভুল ধারণা। তবে আনারসের ব্রোমালিন এনজাইম ও দুধের কেজিন প্রোটিন একসঙ্গে হয়ে ছানা তৈরি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে কারও কারও পাতলা পায়খানা বা সাময়িক বদহজম হতে পারে, সেটাও সবার ক্ষেত্রে নয়।
তেঁতুল খেলে প্রেশার কমে
তেঁতুল পটাশিয়ামের খুব ভালো উৎস, যা সরাসরি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত। তবে অনেকে প্রেশার কমাতে প্রচুর লবণ দিয়ে তেঁতুলপানি খান, যা প্রেশার আরও বাড়ায়। তা ছাড়া রক্তচাপ বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াই বাঞ্ছনীয়, তেঁতুলের ওপর ভরসা করলে চলবে না। তবে প্রতিদিন রান্নায় তেঁতুলের ব্যবহার করলে বা শাক-রসুন দিয়ে করা তেঁতুলের টক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণসহ রক্তের বাড়তি চর্বি কমাতেও সাহায্য করে।
কলা খেলে ঠান্ডা লাগে
ঠান্ডা, কাশি ও জ্বরের সময় কলা খেতে দেওয়া হয় না। তা ছাড়া শিশুদেরও কলা খেতে বাধা দেওয়া হয়। বলা হয়, কলা খেলে ঠান্ডা লাগবে। কলায় উচ্চমাত্রার হিস্টামিন থাকে, যা মিউকাস ও শ্লেষ্মার পরিমাণ বাড়ায়। তাই শ্বাসতন্ত্রের কোনো রোগ যদি ১৪ দিনের বেশি থাকে, সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন কলা খাওয়া যেতে পারে। তবে শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডা-কফ বা শ্বাসতন্ত্রের রোগে কলা সাময়িকভাবে না দেওয়াই ভালো। কিন্তু জেনে রাখুন, কলায় এমন কোনো উপাদান নেই, যা ঠান্ডা-সর্দি-কাশি তৈরি করবে।
গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া যাবে না
আনারসে ব্রোমেলিন এনজাইম থাকে। অতিরিক্ত ব্রোমেলিন জরায়ুর সংকোচন-প্রসারণ বাড়ায় ও সারভিক্সকে নরম করে, এ কারণে অসময়ে সংকোচন তৈরি হতে পারে। তবে একটা আনারসে যে পরিমাণ ব্রোমেলিন থাকে, তা মোটেই গর্ভবতী নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু দিনে যদি ৮ থেকে ১০টি আনারস একসঙ্গে খাওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। একজন গর্ভবতী নারী নির্ধারিত সার্ভিং অনুযায়ী দৈনিক আনারস খেতে পারবেন।
লেবু খেলে চর্বি কাটে
লেবুতে চর্বি ঝরানোর নির্দিষ্ট কোনো উপাদান বা বৈশিষ্ট্য নেই। তবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে বলে বিপাকের গতি বাড়িয়ে লেবু হজম ক্ষমতা বাড়ায়। আর দেহের বিপাকের গতি যত বাড়বে, ওজন কমার গতিও তত বাড়বে। তাই সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও ব্যায়াম না করে শুধু লেবু খেলেই চর্বি কাটবে না।
ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়বে
একটি ডিমে মোট ফ্যাট থাকে ৪ দশমিক ৬ গ্রাম (১ চা চামচ) যার ভেতর ১ কোয়ার্টারের মতো থাকে কোলেস্টেরল। এই পরিমাণের কোলেস্টেরল আমাদের যকৃৎ স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করে ফেলে। যাদের রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি, হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ইতিহাস আছে, তারা পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খেতে পারবেন। একজন মানুষ আমিষের আদর্শ উৎস হিসেবে প্রতিদিন ডিম খাবেন। কিন্তু বয়স, ওজন, শারীরিক অবস্থাভেদে সপ্তাহে কয় দিন কুসুমসহ খাবেন, কয় দিন সাদা অংশ খাবেন, তা জেনে নিতে হবে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় স্যাচুরেটেড ও ট্রান্সফ্যাট–সমৃদ্ধ খাবার। অনেকে বাইরের খাবার ও ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড খান কিন্তু ডিম খেতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন। অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরলের জন্য শুধু ডিমকে দায়ী না করে স্যাচুরেটেড ও ট্রান্সফ্যাট–সমৃদ্ধ খাবার নিয়ন্ত্রণ করুন।
কাটাছেঁড়া বা সার্জারিতে টক খাওয়া যাবে না
প্রকৃত ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত। শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে কিংবা সার্জারির পর টকজাতীয় ফল খেলে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে উঠে। কারণ ওই সব ফলে রয়েছে ভিটামিন-সি, যা ঘা শুকাতে ও নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। এ কারণে এ সময় ভিটামিন সি জাতীয় ফল যেমন- লেবু, কমলা, আনারস, জাম্বুরা, আমড়া, মাল্টা ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
টিটি/