‘বর্তমান পরিস্থিতি অতিক্রম করে পূর্বের অবস্থায় ফেরার চেষ্টা করছি’
ড. ফা হ আনসারী। দেশের বৃহত্তম করপোরেট প্রতিষ্ঠান এসিআই (অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ) শিল্প গ্রুপের এসিআই মোটরস লিমিটেড, এসিআই এগ্রোলিংক, প্রিমিয়ারফ্লেক্স প্লাস্টিকস ও এসিআই এগ্রিবিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। সুইজারল্যান্ডের কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিনজেনটায় চাকরি শুরু করে ৩৮ বছরের ব্যবধানে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছেন তিনি।
কৃষি সেক্টর কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, কৃষি শিল্পের রূপান্তর, কৃষিতে এসিআই কী অবদান রাখছে? ঢাকাপ্রকাশ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন ফা হ আনসারী। গত রবিবার (২৮ আগস্ট) এসিআই এর তেজগাঁও অফিসে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকাপ্রকাশ-এর সিনিয়র রিপোর্টার জাহাঙ্গীর আলম।
ঢাকাপ্রকাশ: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি আপনাদের ব্যবসায় কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে?
ফা হ আনসারী: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বর্তমানে দেশেও পেট্রোল, ডিজেলের দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে কারখানা চালাতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। কারণ ডিজেল দিয়ে কারখানা চালাতে হচ্ছে। ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের দাম বেড়ে গেছে। আমদানি খরচ বেড়েছে, উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। ধান ও গমের কারণে চাল, আটার দামও বেড়ে গেছে। তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। সামগ্রিকভাবে দেশে সব জায়গায় প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়ে একই অবস্থা। প্রায় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তাই আমাদের পণ্যের দামও কিছুটা বেড়েছে। সর্বসাকুল্যে যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে তাতে আমাদের ব্যবসাকে হার্ড করছে। তার মানে এই নয় যে, আমাদের ব্যবসা কমে গেছে। বরং আমাদের ব্যবসা বেড়েছে। তবে লাভটা কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা ভয় পাই না। আমাদের টিমকে সেভাবে শক্তিশালী করছি। কাস্টমার বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। এই পরিস্থিতিকে অতিক্রম করে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
ঢাকাপ্রকাশ: এসিআই কীভাবে কৃষকদের সহায়তা করছে?
ড. ফা হ আনসারী: আমরা (এসিআই) কমপ্লিট এগ্রিকালচার ভ্যালু চেইন নিয়ে কাজ করি। ভ্যালু চেইনের মধ্যে টেকনোলজি, সিড, ফার্টিলাইজার, ক্রপ প্রটেকশন, অ্যানিম্যাল হেল্থ, গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের জন্য সিমেন উৎপাদন ও এক্সপোর্ট করছি। আমাদের ফ্লাওয়ারমিল, রাইসমিল করা হয়েছে। ফুড প্রসেস করি। এসব পণ্য স্থানীয়ভাবে বিক্রি করি। রপ্তানিও করি। আমাদের ‘স্বপ্ন’কে দেশের সবচেয়ে বড় রিটেইল শপিং সেন্টার করা হয়েছে। কমপ্লিট এগ্রিকালচার ও ফুড ভ্যালু চেইন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষকের সম্পদ বৃদ্ধি করা। কৃষককে ফোকাস করা। বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ হচ্ছে কৃষক। তাই এসিআই দেশে সবচেয়ে বড় কোম্পানি হিসেবে কৃষকের সম্পদ বৃদ্ধিতে সব কিছু করার চেষ্টা করছে। এতে কৃষকের আরও উন্নয়ন হবে।
ঢাকাপ্রকাশ: এসিআই কীভাবে কৃষি থেকে শিল্পপণ্যে রূপান্তর করছে?
ড. ফা হ আনসারী: গত চার দশকে কৃষিতে একটি বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এরফলে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। যেহেতু এ দেশের অর্ধেক মানুষ গ্রামে বাস করে। আমরা তাদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছি। যাতে কৃষি পণ্য উৎপাদন করে কৃষকরা লাভ করতে পারে। এতে কৃষকের খরচ কমে যায়। আমরা এক্সটেনশন ওয়ার্ক করি। আমাদের হাজার হাজার কর্মী মাঠে কাজ করছে। ডিজিটাল প্লাটফর্ম আছে। সব ফার্মারকে কানেক্ট করছি। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে দেশের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে টেকনিক্যাল সহযোহিতা দিচ্ছি। কৃষকের দোড় গোড়ায় সব সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। জমিতে বীজ উৎপাদন করছি। সারাদেশে আমাদের ১০ হাজারের বেশি কন্ট্রাক্ট ফার্মিং আছে। তারা আমাদের বীজ সরবরাহ করে। আমরা কৃষকের পণ্য কিনে প্রক্রিয়াজাত করে তা দেশের বাজারে বিক্রি করি, রপ্তানিও করি। আমরা কৃষকদের অ্যানিম্যাল হেল্থ, এগ্রিমেশিনারিজ সাপ্লাই দিই। ফার্মাসিউটিক্যিাল প্রডাক্ট, ভ্যাকসিনও সাপ্লাই দিই।
ঢাকাপ্রকাশ: করোনার প্রভাব কেটে বর্তমানে কোনো পর্যায়ে এসেছে এসিআই?
ড. ফা হ আনসারী: করোনা আমাদের ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ১৩ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার। আমাদের বেশির ভাগ কাঁচামাল আমদানি করা হয়। এ ছাড়া ডলারের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। ৮৬ থেকে বাড়তে বাড়তে ১১৮ টাকায় চলে এসেছে। এতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
ঢাকাপ্রকাশ: প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিপণ্য কীভাবে কৃষকের উপর প্রভাব ফেলেছে?
ড. ফা হ আনসারী: আমরা বাজারে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছি। কৃষিযন্ত্রপাতিতে আমরা বাংলাদেশে প্রথম অবস্থানে। আমরাই বাংলাদেশে প্রথম কমবাইন্ড হারভেস্ট মেশিন নিয়ে এসেছি বাজারে। এর মাধ্যমে কৃষক বাড়িতে বসে দেখতে পায় কতটুকু জমির ধান কাটা হচ্ছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না তা জানতে পারছে। সেচ পাম্পও কৃষকের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে প্রায় কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে কৃষকের কাছে। তাদের সমাধান দিচ্ছি। শুধু সসমাধান দিলে হবে না, তাদের সার্ভিসও দেওয়া হচ্ছে। প্রকৌশলীদের সেভাবে কন্ট্রাক্ট করে ৬ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাক্টর সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের সেভাবে সেবাও দেওয়া হচ্ছে। মোটরসইকেলের ক্ষেত্রে আড়াই ঘন্টার মধ্যে সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকাপ্রকাশ: নতুন আর কোনো পণ্য আনার উদ্যোগ নিয়েছেন কি?
ড. ফা হ আনসারী: আমরা কৃষি সেক্টরের জন্য নতুন করে আরও মেশিন আনার চিন্তাভাবনা করছি। এগুলো ট্রায়াল স্টেজে আছে। আমরা কনস্ট্রাটশনের মধ্যে ক্রেন, মিক্সার মেশিন বিক্রি করি। মেশিনারিজ ব্যবসার মধ্যে আমরা মোটরসাইকেল বিক্রি করি। তা উৎপাদনও করছি। এসিআই মোটরস নামে রাজেন্দ্রপুরে কারখানা আছে।
এনএইচবি/এসএন