আলোচনা অথবা যুদ্ধ–লক্ষ্য অর্জন করবই: পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন অভিযানে লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘আলোচনা কিংবা যুদ্ধ–যেভাবেই হোক রাশিয়া লক্ষ্য অর্জন করবে।’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা ফোনালাপে পুতিন এসব কথা বলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ফোনালাপে ফরাসি প্রেসিডেন্ট অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের পারমাণবিক কেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাগিদ দেন। ইউক্রেনের দাবি, রুশ গোলাবর্ষণে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন ধরে গিয়েছিল। তবে আগুনের ওই ঘটনার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছে ক্রেমলিন।
পুতিন বলেছেন, রবিবার (৬ মার্চ) মারিউপোল এবং ভলনোভাখা শহরে ‘যুদ্ধবিরতি’ ভেস্তে যাওয়ার কারণ হলো–ইউক্রেনের বেসামরিক মানুষজনকে যেতে বাধা দিয়েছে; বরং এই সুযোগে তারা শক্তি বৃদ্ধি করার চেষ্টা চালিয়েছে।
এর আগে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেডক্রস জানিয়েছিল, কীভাবে বেসামরিক মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হবে, তা নিয়ে দুই পক্ষ একমত হতে না পারায় তারা কাজ শুরু করতে পারেনি।
ইউক্রেনে রুশ হামলা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়। এরপর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রুশ বাহিনী। ধ্বংস করে বিভিন্ন বিমানঘাঁটি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সোমবার (৭ মার্চ) ১২তম দিনেও হামলা অব্যাহত রয়েছে।
হামলা থেকে বাঁচতে ইউক্রেন থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষ পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। রুশ হামলা ঠেকাতে পশ্চিমা দেশগুলো নানা রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করে চলেছে।
যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বেলারুশ সীমান্তে দুই দফায় বৈঠকে বসেন। তবে দুবারই বৈঠক কোনো কাজে আসেনি। ইউক্রেন বলছে, তারা চলতি সপ্তাহে আবারও বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
এগারো দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষে আজ চলছে যুদ্ধের ১২তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/