রুশ অভিযানে ইউক্রেনের ২৮৭০ সেনা নিহত
রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনে ২ হাজার ৮৭০ সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন এবং ৩ হাজার ৭০০ সেনা সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি মস্কোর। এর বিপরীতে কিয়েভের দাবি, তারা ৯ হাজার রুশ সৈন্যকে হত্যা করেছে। তবে তারা নিজেদের হতাহতের হওয়ার বিষয়ে কোনো হিসাব প্রকাশ করেনি।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর দেশটির একের পর এক শহর দখল করে চলেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে পুতিন বাহিনী। তবে এতে রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়।
এদিকে, নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির তথ্য প্রকাশ করেছে রাশিয়া। দেশটির দাবি, ইউক্রেনের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯৮ সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৫৯৭ জন। একই সঙ্গে ইউক্রেনের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি করেছে মস্কো। কিয়েভের দাবি, তাদের হামলায় প্রায় ৯ হাজার রুশ সৈন্য নিহত হয়েছেন।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেঙ্কভ বলেন, ‘ইউক্রেনের ১ হাজার ৬১২টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছি আমরা। এ ছাড়া ইউক্রেনীয় সেনাদের ৬২টি যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়েছি আমরা। এ ছাড়া ৫২টি রাডার স্টেশন, ৪৯টি বিমান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সেনারা অভিযান অব্যাহত রেখেছে।’
এতদিন ইউক্রেন অভিযানে রুশ সেনাদের হতাহত হওয়ার কথা মস্কো স্বীকার করে নিলেও তারা সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা উল্লেখ করেনি। এবারই প্রথম রুশ সেনাদের হতাহত হওয়ার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করল মস্কো।
তবে ইউক্রেনের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য, রুশ হামলায় এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। চলমান যুদ্ধে ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। এরমধ্য পোল্যান্ডে ৫ লাখ, স্লোভাকিয়ায় ৭২ হাজার, হাঙ্গেরিতে ১ লাখ ১৬ এবং রোমানিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন ৫১ হাজার মানুষ। প্রতিদিনই সীমান্তে ভিড় করছেন হাজার হাজার মানুষ। খাবার ও বাসস্থানের অভাবে চরম মানবেতর দিন পার করছেন তারা।
প্রসঙ্গত, প্রায় দুই মাস ধরে ইউক্রেন সীমান্তে ২ লাখ সেনা জড়ো করে রাশিয়া। রাশিয়ার সেনা মোতায়েন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বারবার সতর্কতা দিয়েছিল; কিন্তু বরাবরই রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে।
এরপর গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।
আট দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ যুদ্ধের নবম দিন। রাজধানী কিয়েভ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে রুশ সেনারা। শহরটি ঘিরে রেখে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এ হামলা শুরু পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/