খারকিভ দখলের পথে রুশ সেনারা
রুশ সেনারা ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্মকর্তারা। আজ সকালে কিয়েভে বিমান হামলার সাইরেন বন্ধ হয়ে গেছে এবং একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
সোমবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ জারি রেখে ইউক্রেনের রাজধানীর বাসিন্দারা ভূগর্ভস্থ কভার নিচ্ছেন। বিপুল সংখ্যক মানুষ ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড এবং মলদোভাসহ প্রতিবেশী দেশগুলিতে পালিয়ে যাচ্ছে।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের ওপরও রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত। কিয়েভের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের সেনাবাহিনী শহরের ওপর চালানো সবশেষ রুশ আক্রমণ প্রতিহত করেছে। তবে রুশ অন্তর্ঘাতী গ্রুপগুলো রাজধানীর ভেতরে ঢুকে পড়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে তারা দক্ষিণ ইউক্রেনের শহর মেলিতোপোল দখল করেছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার চেচনিয়া অঞ্চলের নেতা রমজান কাদিরভ বলেছেন তিনি ইউক্রেনে তার যোদ্ধাদের পাঠিয়েছেন, যারা রুশ সৈন্যদের সাথে হাত মিলিয়ে যুদ্ধ করবে।
রুশ সৈন্যদের অগ্রাভিযান ঠেকাতে কিয়েভ শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন স্থানে ইউক্রেনীয় সেনা ও বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবীরা অবস্থান নিয়েছে। কিয়েভ শহরে সোমবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক ভিডিও বার্তায় বলছেন তার বাহিনী এখনো কিয়েভ এবং অন্যান্য প্রধান শহরগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে জার্মানি বলছে, তারা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ইউক্রেনের কাছে জার্মানিতে তৈরি প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে নিয়েছে।
ব্রিটেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এ পর্যন্ত যুদ্ধে প্রায় ২০০ ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে যার মধ্যে তিনটি শিশুও আছে। আহত হয়েছে ১০০০ জনেরও বেশি। আর জাতিসংঘ বলছে, গত ৪৮ ঘন্টায় ১ লাখ ২০ হাজার লোক ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছে। । অন্যদিকে লড়াইয়ে এ পর্যন্ত ১৯৮জন ইউক্রেনীয় মারা গেছে বলে জানাচ্ছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
কিয়েভের শহরে যে বহুতল এ্যাপার্টমেন্ট ভবনটি মিসাইলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবার ছবি এর আগে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে – তাতে দুজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাশিয়ার ‘ডার্টি বোমা’ নিয়ে ছড়ানো তথ্য ভুয়া: ইউক্রেন
ইউক্রেন সরকার রাশিয়ান এলাকায় ‘ডার্টি বোমা’র বিস্ফোরণ ঘটাতে চলেছে এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা।
ডার্টি বোমা হল এমন ধরনের বোমা যেখানে সাধারণ বিস্ফোরকের সাথে তেজস্ক্রিয় পদার্থ মেশানো থাকে এবং এর বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ মারা যেতে পারে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সাম্প্রতিক কয়েকদিন ধরে এই সম্ভাবনা নিয়ে কথাবার্তা চলছে। শুক্রবার রাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া প্রতিনিধিদের বলেন: “আমরা চাই না ইউক্রেন ‘ডার্টি বোমা’ তৈরি করুক।”
এক টু্ইট বার্তায় মি. কুলেবা এই সম্ভাবনার কথাকে বিদ্রূপ করে বলেন: “রাশিয়ার প্রচারণা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।”
ইতিহাসে ইউক্রেন একমাত্র রাষ্ট্র যারা স্বেচ্ছায় পারমাণবিক অস্ত্র-মুক্ত দেশ হয়েছে। ১৯৯৪ সালে ইউক্রেন রাশিয়া এবং পশ্চিমের দেশগুলোর কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তার বিনিমেয় প্রায় পাঁচ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমার সম্ভার নষ্ট করে ফেলে।
সূত্র: বিবিসি