ইউক্রেনে যুদ্ধে যেতে চাওয়াদের দীর্ঘ সারি
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর রাজধানী কিয়েভের অনেক নাগরিক মাটির নিচে বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন। দেশটিতে ভলোদিমির জেলেনস্কি সরকার সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে। রাস্তায় কাউকে দেখা গেলে তাকে রাশিয়ার ঘাতক হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এরই মধ্যে যুদ্ধে যেতে চাওয়া ইউক্রেনীয়দের সারি দীর্ঘ লক্ষ্য করা গেছে।
ইউক্রেনের মাটিতে কোনো ন্যাটো সেনা না থাকায় সেখানকার মানুষের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভও রয়েছে। ইউক্রেনীয়রা বুঝেছেন এবং জেলেনস্কি প্রায়ই এটা বলেছেন যে, ‘যুদ্ধ শুরু হলে ইউক্রেনীয়রাই সেটা করবে। আমাদের কাছে ন্যাটোর সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র আছে। কিন্তু তারপরও সবচেয়ে মৌলিক যে বিষয়, দেশপ্রেমের সংকল্প আছে।’
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিবন্ধনের জন্য পরিচালিত অফিসগুলোতে ইউক্রেনীয়দের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে।
বিবিসি জানায়, কয়েক সপ্তাহ ধরে ন্যাটো বাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ, সাইবার ও যোগাযোগের উপকরণ নিয়ে ক্রমাগত যানবাহন আসছে ইউক্রেনের কিয়েভসহ বিভিন্ন স্থানে।
এদিকে রাশিয়াকে রুখতে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে সমরাস্ত্র পাঠিয়েছে জার্মানি। বিবিসি জানিয়েছে, ইউক্রেনে এক হাজার ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র এবং ৫০০ উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র (স্টিংগার) পাঠাবে জার্মানি। দীর্ঘদিন ধরে কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র রপ্তানি না করার নীতিতে ছিল দেশটি। এমনকি তৃতীয় কোনো দেশকে জার্মানির তৈরি সমরাস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার বা পাঠানোর আগে অনুমতিও দিত না বার্লিন। সে জন্য সমরাস্ত্র ইউক্রেনে পাঠাতে যে বাধা ছিল তা প্রত্যাহার করেছে জার্মান সরকার।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস বলেন, ‘ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সেনাদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের সমর্থন করা আমাদের দায়িত্ব।’
বিবিসি জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় ও শনিবার খোলা মাঠে পুরুষদের বিশাল লাইন দেখা গেছে। সেখানে তারা তাদের পাসপোর্ট দেখাচ্ছেন এবং বাহুতে টেপ বেঁধে নিচ্ছেন। প্রায় কোনো যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নেই, শুধু পরিবারকে রক্ষা করার জন্য, দেশকে রক্ষার জন্য তাদের মধ্যে যুদ্ধে যাওয়ার সংকল্প দেখা যাচ্ছে। সেই লাইন প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।
এদিকে আজ ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাজধানী কিয়েভের ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভাসিলকিভে একটি তেলের ডিপোতে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে কিয়েভবাসীকে বিশেষ সতর্ক থাকার বথা বলেছে ইউক্রেন সরকার।
রাজধানী কর্তৃপক্ষ রাজধানীবাসীকে বিষাক্ত ধোঁয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছে। কিয়েভের বাসিন্দাদের ঘরের জানালা ভালো করে বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। রুশ হামলার তৃতীয় রাতে কিয়েভে বিমান হামলার সাইরেন বেজে উঠে। মধ্যরাতের আগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল।
তিন দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। রাজধানী কিয়েভ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে রুশ সেনারা। এ হামলা শুরু পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/