সুইফট থেকে বিচ্ছিন্ন রাশিয়া
বিশ্লেষকদের শঙ্কা সত্য প্রমাণ করে আর্থিক লেনদেনের বার্তা প্রেরণের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফট পেমেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে রাশিয়ার বেশকিছু ব্যাংককে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এ খবর জানিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে রাশিয়াকে আরও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়াই হচ্ছে এ পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্দেশ্য। এতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ আটকে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক রিজার্ভে রাশিয়ার প্রবেশাধিকার সীমিত করা হবে।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র জানায়, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ বন্ধ করার লক্ষ্যে তৃতীয় নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজে হিসেবে জার্মানি এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়াকে সুইফট গ্লোবাল পেমেন্ট সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্ন করতে দিতে সম্মত হয়েছে।
সেই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালি, গ্রেট ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় কমিশনের এ নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেশটির মুদ্রা রুবেল ব্যবহারের ক্ষমতা সীমিত করার পদক্ষেপটিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পঙ্গু করে দেব। এ পদক্ষেপের ফলে রাশিয়ার ব্যাংকগুলো বিশ্বব্যাপী তাদের বেশিরভাগ আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করতে পারবে না। দেশটির আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, আমরা পুতিনকে তার যুদ্ধের তহবিল ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখব। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ পঙ্গু করে দেওয়া হবে। এতে ব্যাংকের লেনদেন স্থবির হয়ে পড়বে। এ পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে তার সম্পদকে তারল্যে রূপান্তর করা অসম্ভব করে তুলবে। এসব পদক্ষেপ পুতিনের যুদ্ধে বিনিয়োগ করা কঠিন করে তুলবে।’
এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন একটি টুইটবার্তায় বলেন, ‘আমরা আজ রাতে আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে বসে রাশিয়াকে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যার মধ্যে রয়েছে সুইফট থেকে রাশিয়ান ব্যাংকগুলোকে বের করে দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ। খুব শিগগির এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হবে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ এবং কানাডা এ পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে সম্মত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাশিয়া তাদের তেল ও গ্যাস রফতানির জন্য সুইফট সিস্টেমের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। রাশিয়ার ইউক্রেনের আগ্রাসনের পর যেসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে এ যৌথ নিষেধাজ্ঞাটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোরতম পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
সুইফট বা সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন হলো একটি সুরক্ষিত বার্তা আদান-প্রদানকারী সিস্টেম যা দ্রুত, আন্তঃসীমান্ত পেমেন্ট সম্ভব করে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে।
বেলজিয়ামে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বজুড়ে ১১ হাজারেরও বেশি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনের সুবিধা দিয়ে থাকে। এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিকে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে প্রতিষ্ঠানটির কারও উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো কর্তৃত্ব নেই।
এ বিষয়ে জার্মান মুখপাত্র বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপরও নিষেধাজ্ঞা দেবে।’
বিশ্বের প্রায় সব ব্যাংক এ সিস্টেমটি ব্যবহার করে। সুতরাং সুইফট থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে সরিয়ে দেওয়া দেশটির জন্য একটি গুরুতর বাধা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালায় রাশিয়া। তিন দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। রাজধানী কিয়েভ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে রুশ সেনারা। এ হামলা শুরু পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/