রাশিয়ার উপর আরও যেসব নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে
রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। নিষেধাজ্ঞার বহরে যুক্ত হয়েছে ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো পশ্চিমা দেশগুলো। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, রাশিয়া যদি কিয়েভ দখল করে নেয়, তাহলে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
আলোচনায় রয়েছেযেসব নিষেধাজ্ঞা, তার মধ্যে রয়েছে–
১. সুইফট সেবা বন্ধ রাখা
সুইফট হলো–বিশ্বের নানা প্রান্তের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লেনদেনের কাজে ব্যবহৃত একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক। রাশিয়াকে সুইফট সেবার বাইরে রাখতে পদক্ষেপ নিতে পারে পশ্চিমা বিশ্ব।
এমন নিষেধাজ্ঞা এলে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর জন্য দেশের বাইরে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। তবে এর উল্টো প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মতো দেশগুলোর ওপর। কারণ রাশিয়ার সঙ্গে এসব দেশের ব্যাংকগুলোর ঘনিষ্ঠ সংযোগ রয়েছে।
২. মার্কিন ডলার ব্যবহারে বাধা
আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে রাশিয়া মার্কিন ডলার ব্যবহার করতে পারবে না–এমন নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা কোনো প্রতিষ্ঠান ডলারে লেনদেন করলে সাজার মুখে পড়বে।
ডলারে লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা এলে রাশিয়ার অর্থনীতি বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। কারণ দেশটি থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস ডলারের বিনিময়ে রপ্তানি করা হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত রাশিয়ার অন্য খাতগুলোতেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অবশ্য এমন নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস আমদানিকারী ইউরোপীয় দেশগুলোতেও সংকট দেখা দিতে পারে।
৩. প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানি বন্ধ
রাশিয়ায় মূল প্রযুক্তিপণ্যগুলোর রপ্তানি বন্ধ করতে পারে পশ্চিমা দেশগুলো। এসব পণ্যের মধ্যে থাকতে পারে সেমিকন্ডাক্টর মাইক্রোচিপ। গাড়ি থেকে শুরু করে স্মার্টফোন সবকিছু তৈরি করতেই প্রয়োজন এই মাইক্রোচিপের।
প্রযুক্তিপণ্যগুলো হাতে না পেলে যেমন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ গবেষণা খাত ক্ষতির মুখে পড়বে, তেমনই ধাক্কা খাবে অর্থনীতি। একই সঙ্গে রাশিয়ায় এসব পণ্য রপ্তানিকারী দেশগুলোর ওপরও প্রভাব আসবে।
৪. জ্বালানি আমদানি বন্ধ
প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেল রপ্তানির ওপর রাশিয়ার অর্থনীতি বহুলাংশে নির্ভরশীল। এমন পরিস্থিতিতে গাজপ্রম ও রসনেফটের মতো দেশটির বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তেল ও গ্যাস কেনা বন্ধ করতে পারে পশ্চিমারা।
রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করলে ইউরোপের দেশগুলোতে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে, দেখা দিতে পারে তেলের সংকট। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে জার্মানি। রাশিয়া থেকে আমদানি করা গ্যাসেই দেশটির তিন ভাগের একভাগ চাহিদা মেটে।
৫. কালো তালিকায় রুশ ব্যাংক
রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এতে করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তর্জাতিক লেনদেন করা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়বে। অবশ্য এসব ব্যাংকে যেসব পশ্চিমা বিনিয়োগকারীর অর্থ রয়েছে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
ইউরোপীয় ও মার্কিন কূটনীতিকদের মতে, পশ্চিমা দেশগুলো এ পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, সে বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ নয়। বেশকিছু দেশের রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে হাঙ্গেরি, ইতালি ও অস্ট্রিয়া। এসব দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রধান প্রধান ব্যাংকের সম্পদ ফ্রিজ করা এবং উচ্চ প্রযুক্তি-সংক্রান্ত পণ্যের আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, রাশিয়া কোনো কারণ ছাড়াই পূর্বপরিকল্পিতভাবে যুদ্ধ শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যা আগে থেকেই জেনে রাশিয়াকে সতর্ক করেছিল। তবে রাশিয়া পশ্চিমাদের দেওয়া সব আলোচনার প্রস্তাব উপেক্ষা করে একতরফা ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা চালায়। যার পরিণাম মোটেই ভালো হবে না এবং এর দায় রাশিয়াকেই নিতে হবে।
রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম ব্যাংকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, যাতে দেশের ব্যাংকিং খাতের এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ রয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপিত এসব ব্যাংকগুলোর মোট সম্পদের মূল্যমান এক ট্রিলিয়ন ডলার।
পুতিনকে বিদেশে সেনা পাঠানোর ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা রুশ পার্লামেন্টের ৩৫১ জন সদস্যের সম্পদ জব্দ ও ভিসা বাতিল করার পাশাপাশি ২৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুটি ব্যাংক ও তাদের ৪২টি শাখাসহ ক্রেমলিনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা পাঁচ ধনকুবেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। যুক্তরাজ্য রাশিয়ার পাঁচ ব্যাংক ও তিন ধনকুবেরের ওপর এবং জাপান রাশিয়ার সরকারি বন্ড ও দুই রাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভিসায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। ইইউর ব্যাংকগুলোতে থাকা দেশটির তহবিল আটকে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি ইইউর সঙ্গে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে বাধা আসছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের মধ্যে নর্ডস্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলত্জ। রাশিয়া থেকে জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে এ প্রকল্প নিয়ে কথা চলছিল দেশ দুটির মধ্যে।
কানাডাও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের সঙ্গে কোনো আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন না দেশটির নাগরিকেরা। অঞ্চল দুটিকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিতে ভোট দেওয়া রুশ পার্লামেন্ট সদস্যরা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন। কানাডার কালোতালিকায় পড়বে রাশিয়ার দুটি রাষ্ট্র পরিচালিত ব্যাংকও।
এসএ/