রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
ব্যারেল প্রতি তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়াল
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর সাত বছরে প্রথমবারের মতো ব্যারেল প্রতি জ্বালানি তেলের দাম ১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় বিবিসি।
কয়েকদিন আগে পুতিন শান্তি চুক্তি বাতিল করে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী-অধ্যুষিত এলাকায় সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়ার পর তেলের দাম ৯৮ ডলার হয়েছিল।
এই সংঘাতের খবরে সমস্ত শেয়ার বাজারে দরপতন হয়েছে। ইউরোপের সব বড় বড় স্টক মার্কেটে দিনের শুরুতেই দাম আড়াই থেকে চার শতাংশ পড়ে যায়।
অন্যদিকে মার্কিন ডলার, সুইস ফ্রাঁ এবং সোনার দাম বেড়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার ইউরোপে আগাম কেনাবেচায় ব্যারেল প্রতি ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের দাম ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ১০২ দশমিক ৩২ ডলারে উঠেছে। এটি ২০১৪ সালের পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ দাম।
আবার এর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এছাড়া সোনার আউন্সপ্রতি দাম ১ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯৪২ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়বে—এমন আশঙ্কা এখন প্রবল।
সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার সামান্য আগে ক্রেমলিন একটি বিবৃতি জারি করেছে। সেখানে সরাসরি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের কথা বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' টেলিভিশনে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয় বলে এএফপি জানিয়েছে।
এদিকে পুতিন জানিয়েছেন, পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষা করতেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাকে। বস্তুত, রাশিয়ার অভিযোগ, ইউক্রেনই পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। তাদের রক্ষা করতেই রাশিয়াকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো। এর আগেই পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দিতে সেনা পাঠিয়েছিল রাশিয়া। পুতিনের ঘোষণার পরেই সমস্ত যাত্রীবাহী বিমান উড্ডয়ন বাতিল করে দেয় ইউক্রেন। এয়ার স্পেস বিমানবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দেশে জারি হয়েছে মার্শাল আইন। তারই মধ্যে কিয়েভে শক্তিশালী বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানা গেছে। রাশিয়া কিয়েভে মিসাইল হামলা চালিয়েছে বলে ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যমের দাবি। যদিও পুতিন জানিয়েছিলেন, শুধু পূর্ব ইউক্রেনেই আক্রমণ চালানো হবে। সেখানে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণের কথা বলেছেন তিনি।
এদিকে বুধবার রাতে আমেরিকায় ইউক্রেন সংকট নিয়ে তৃতীয় জরুরি বৈঠকে বসে জাতিসংঘ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির অনুরোধেই দ্রুত বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। অনুরোধে জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, রাশিয়া যে কোনো সময় যুদ্ধ শুরু করে দিতে পারে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠক শুরু হয়। জাতিসংঘের প্রধান পুতিনের কাছে যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি বৈঠকে বসার অনুরোধ জানান। কিন্তু পুতিন সে কথায় কান দেননি। যুদ্ধঘোষণা করে দিয়েছেন বৃহস্পতিবার সকালে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক শুরু হয়েছে। সেখানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার প্রস্তাব পেশ হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া অন্যতম সদস্য। প্রস্তাবে তারা ভেটো দিলে তা কোনোভাবেই পাশ হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য।
আরএ/