ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনে অস্থির তেলের বাজার
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার বিশাল সেনা সমাবেশের পর থেকেই তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। যুদ্ধের অশনিসংকেত যেন গ্রাস করে পুরো বিশ্বকে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে সেনা পাঠিয়েছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাশিয়ার এই পদক্ষেপের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে তেলের দাম বেড়েছে। বড় পুঁজিবাজারগুলোতে দরপতন ঘটেছে।
গার্ডিয়ান জানায়, রাশিয়ার ওই পদক্ষেপের পরপরই বিশ্বে তেলের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। অপরিশোধিত তেলের দাম গতকাল সকালেই প্রায় ৪ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৯৯ মার্কিন ডলারের বেশি হয়েছে। বিশ্বে তেল ও গ্যাসের বড় সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার পদক্ষেপে বিশ্বে তেল ও গ্যাসের সরবরাহ বিঘ্নিত হবে–এমন আশঙ্কায় দামের এই উল্লম্ফন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তেলের দর অচিরেই ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়াবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর আগে এভাবে তেলের দর বেড়েছিল ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে। ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত এক মাস ছয় দিনের এক সামরিক অভিযানে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নিয়েছিল রাশিয়া।
এদিকে ইউরোপীয় পুঁজিবাজার গতকাল দিনের শুরুতেই বড় ধাক্কা খেয়েছে। জার্মানি ও ফ্রান্সের পুঁজিবাজারে সূচকের ২ শতাংশ পতন ঘটেছে। যুক্তরাজ্যের পুঁজিবাজারে সূচকের পতন ঘটেছে প্রায় ১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারেও বড় দরপতন ঘটেছে। এশিয়ায় জামানের নিক্কেইয়ের পতন ঘটেছে প্রায় ২ শতাংশ, কোরিয়ার কসপির দর কমেছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। এদিকে চীনের সাংহাই ও হংকংয়ের পুঁজিবাজারেও সূচকের পতন ঘটেছে। একই অবস্থা অস্ট্রেলিয়ায়ও।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক দীর্ঘ বক্তব্যে পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে মস্কোপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছেন। সেখানে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠায়’ রুশ সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তও জানান।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে দেওয়া ওই ভাষণে পুতিন রাশিয়া ও ইউক্রেনের ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
তিনি অভিযোগ করেন, কিয়েভ ক্রমান্বয়ে পশ্চিমের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। পুতিন বলেন, ‘রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। দেশটির পূর্বাঞ্চল প্রাচীন রাশিয়ার অংশ।’
মঙ্গলবার দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা সংক্রান্ত প্রস্তাব রাশিয়ার পার্লামেন্ট স্টেট দুমার উচ্চকক্ষে অনুমোদন পেয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে প্রস্তাবটি স্টেট দুমার নিম্নকক্ষে উত্থাপন করা হয়। সে সময় পুতিন অবশ্য আভাস দিয়েছিলেন, এমন কিছু করার ইচ্ছা তার নেই। কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানেই সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন তিনি।
গতকাল যে সময় পুতিন ওই ভাষণ দেন, তার ঘণ্টাখানেক আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছা পোষণ করেন। ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে এই বৈঠক আয়োজনে এরপরই কাজ শুরু করে দেয় মধ্যস্থতাকারী ফ্রান্স।
গতকাল আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে মস্কোয় বৈঠকে পুতিন বলেছেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্বাধীন হওয়া সব দেশকে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক রাশিয়া। তবে ইউক্রেনের বিষয়টি ভিন্ন। কারণ, দুঃখজনকভাবে এই দেশের ভূখণ্ড তৃতীয় পক্ষ ব্যবহার করছে রাশিয়ার জন্য হুমকি সৃষ্টিতে।’
এসএ/