বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ‘গোল্ডেন ভিসা’ বাতিল করল যুক্তরাজ্য
‘গোল্ডেন ভিসা’ নামে পরিচিত ব্রিটেনের বিতর্কিত টায়ার ওয়ানের আওতাধীন ‘ফরেন ইনভেস্টর্স ফাস্ট ট্র্যাক রেসিডেন্সি ভিসা’ বাতিল করেছে দেশটির সরকার। এই ভিসার আওতায় ব্রিটেনে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ করে সপরিবারে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাওয়া যেত। ‘অবৈধ অর্থ ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে নতুন করে কঠোর ব্যবস্থা’ নিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) এই বিশেষ ভিসা বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। তিনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানান, অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বলেন, ‘আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহারকারীদের প্রতি আমার জিরো টলারেন্স রয়েছে। নতুন অভিবাসন পরিকল্পনায় ব্যবস্থাটির প্রতি ব্রিটিশ মানুষের আস্থা নিশ্চিত করতে চাই। এ ছাড়া দুর্নীতিবাজ অভিজাতদের ঠেকানো প্রয়োজন, যারা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং আমাদের শহরগুলোতে কালো মুদ্রা ছড়াচ্ছে।
প্রীতি প্যাটেল আরও বলেন, ‘এই ভিসা বন্ধ হলো জালিয়াতি ও অবৈধ অর্থায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার পুনরায় সূচনা। আমরা জালিয়াতি ঠেকানোর পরিকল্পনা প্রকাশ করব। একইসঙ্গে আসন্ন অর্থনৈতিক অপরাধ বিলে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার বিধান থাকবে।’
২০০৮ সালে এই ভিসাটি চালু করা হয়েছিল। এর আওতায় ন্যূনতম দুই মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করে পরিবারসহ দেশটিতে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ দেয় সরকার। মূলত, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলোর ধনিক শ্রেণিকে আকৃষ্ট করতেই এ ভিসা চালু করা হয়েছিল। বিনিয়োগের অঙ্কের ভিত্তিতে স্থায়ী হওয়ার অনুমোদন দ্রুত পাওয়া যেতো। দুই মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগে ৫ বছর, পাঁচ মিলিয়নে ৩ বছর এবং দশ মিলিয়ন বিনিয়োগে দুই বছরে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ ছিল।
গোল্ডেন ভিসা বাতিলের ঘোষণাটি এমন সময় এল যখন ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুতিন সরকারকে চাপে ফেলতেই ব্রিটেনের এমন পদক্ষেপ বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০২০ সালে পার্লামেন্টে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কমিটি যুক্তরাজ্যে রুশ প্রভাবের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এর অংশ হিসেবে টায়ার ওয়ান ভিসা অনুমোদনের জন্য ‘আরও শক্তিশালী’ পদ্ধতি যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস বলেছিল, দুর্নীতির সুবিধার্থে যেন এই ভিসা ব্যবহার না হয়, তাই কিছু সংস্কার আনা হয়েছে।
২০২০ সাল পর্যন্ত চীনের ৪ হাজার ১০৬, রাশিয়ার ২ হাজার ৫২৬, হংকংয়ের ৬৯২, যুক্তরাষ্ট্রের ৬৮৫, পাকিস্তানের ২৮৩, ভারতের ২৫৪, কাজাখিস্তানের ২৭৪, সৌদি আরবের ২২৩, তুরস্কের ২২১ ও মিশরের ২০৬ জন নাগরিক এই ভিসার আওতায় যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
এসএ/