মিয়ানমারে ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হলো জরুরি অবস্থার মেয়াদ
ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার দেশটিতে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের চার বছর পূর্তির মাত্র একদিন আগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। এর পর থেকে দেশটি গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের সাফল্য পাচ্ছে। বর্তমানে দেশের বহু অঞ্চল বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে, যা জান্তা সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
জান্তা বাহিনী আগামী মাসগুলোতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। তবে সমালোচকদের মতে, এটি সেনাবাহিনীর প্রক্সিদের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার একটি প্রহসন হতে পারে। কারণ, সেনাবাহিনী বারবার জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়ে এসেছে, যা তাদের ক্ষমতা নিশ্চিত রাখার কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।
রাষ্ট্র পরিচালিত এমআরটিভি তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক বিবৃতিতে বলেছে, "একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।"
নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। তবে জান্তা সরকার তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একাধিক ফ্রন্টে লড়াই চালিয়ে যেতে গিয়ে সেনাবাহিনী ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সামরিক বাহিনী ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হচ্ছে এবং দেশের অনেক জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে।
সামরিক শাসনের চার বছরে মিয়ানমারের অর্থনীতি ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়েছে। একসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিবেচিত হলেও এখন মিয়ানমারের অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যস্ত। সামরিক বাহিনী বিদ্রোহীদের দমন করতে গিয়ে ব্যাপক চাপে রয়েছে, যা সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রাকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।
জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে যে, জান্তা সরকার এখনো পরিস্থিতির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিলেও বিদ্রোহীদের ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধ এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এই পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।