মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড যাচ্ছেন বাংলাদেশি রোগীরা, কলকাতার হাসপাতাল ব্যবসায় ধস
মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড যাচ্ছেন বাংলাদেশি রোগীরা, কলকাতার হাসপাতাল ব্যবসায় ধস। ছবি কোলাজ: ঢাকাপ্রকাশ
বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর, ভিসা জটিলতা ও নানা কারণে ভারতের কলকাতা, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলে বাংলাদেশি রোগী ও পর্যটকদের আগমন ব্যাপকভাবে কমেছে। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার কয়েকটি হাসপাতাল এবং চিকিৎসক ‘বাংলাদেশি রোগী দেখব না’ বলে ঘোষণা দেওয়ার পর, বাংলাদেশের চিকিৎসা প্রত্যাশীদের ভারতে আসার সংখ্যা আরও কমে গেছে। এর ফলে কলকাতা ও ভারতের অন্যান্য শহরের হাসপাতাল ব্যবসায় এবং আশপাশের হোটেল ব্যবসায় ব্যাপক মন্দা দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালের ব্যবসায় অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে, কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়ে গেছে বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে, যেমন ডিসান, রুবি, নারায়ণা, ফর্টিস, মেডিকা, পিয়ারলেসে। বহু ডাক্তার, যারা সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করতেন, তাদের শিডিউল কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ডা. অমিতাভ মালাকার, যিনি বাইপাসের বেশ কিছু হাসপাতালে রোগী দেখতেন। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, এখন হাসপাতালগুলো তাদের শিডিউল কমিয়ে এক ঘণ্টায় সীমাবদ্ধ রেখেছে। এদিকে ডিসান হাসপাতাল বহু ডাক্তারকে জানিয়েছে, বর্তমানে তাদের আসার প্রয়োজন নেই, রোগী বাড়লে তাদের ডাকা হবে।
হাসপাতালগুলোর রোগী কমে যাওয়ায় নার্স, আয়া ও সিকিউরিটি গার্ডদেরও সংকট তৈরি হয়েছে। এক নার্স, যিনি পিয়ারলেস হাসপাতালে ১০ বছর কাজ করেছেন, জানিয়েছেন যে, এমন পরিস্থিতি আগে কখনো দেখেননি। রোগীর চাপের কারণে তাদের কর্মব্যস্ততা ছিল, কিন্তু এখন কর্তৃপক্ষ বলছে হাসপাতালগুলো লোকসানে চলছে। ফলে নার্সদের অনেককেই ‘উইদাউট পে’ ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
এছাড়া, নারায়ণাতেও সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করা এক ব্যক্তি জানান, বাংলাদেশি রোগী না থাকায় গার্ডের প্রয়োজন কমে গেছে। ফলে তার কাজ চলে গেছে এবং এখন একটি ছোট কোম্পানিতে নাইট ডিউটি করছেন। এতে তার আয় কমে গেছে।
বাইপাসের হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা প্রায় তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। কলকাতা ও আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে, যেখানে আগে প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ রোগী বাংলাদেশ থেকে আসতেন, এখন তাদের সংখ্যা কমে গেছে। বিশেষ করে হার্ট, নিউরোসার্জারি, ক্যানসার, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, ইউরোলজিক্যাল সমস্যা, অর্থোপেডিক রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি ও বন্ধ্যত্ব সংক্রান্ত চিকিৎসায় বাংলাদেশিরা কলকাতায় ভরসা রাখতেন, কিন্তু এখন তাদের অধিকাংশই দেশে আটকে পড়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে, অনেক বাংলাদেশি রোগী এখন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। ফলে কলকাতার হাসপাতালগুলোতে সাপ্তাহিক ১২-২১ লাখ টাকার ব্যবসা কমে গেছে। হাসপাতালগুলোর আশপাশের খাবারের হোটেলগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকেই তাদের হোটেল বন্ধ করে অন্য ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবছেন। তবে তারা আশাবাদী যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার তাদের ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে।