চীনের সঙ্গে বিআরআই প্রকল্পে চুক্তি করে ভারতকে হতাশ করল নেপাল
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমেই কূটনৈতিক মিত্র হারাচ্ছে ভারত। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বৈরিতার পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং বাংলাদেশের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। সর্বশেষ, নেপালের সঙ্গে চীনের বিআরআই (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) প্রকল্পের কাঠামোগত চুক্তি দিল্লির জন্য নতুন এক ধাক্কা হিসেবে এসেছে।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে. পি. শর্মা ওলি তার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে বেইজিংকে বেছে নিয়েছেন। ঐতিহ্য অনুযায়ী নয়াদিল্লি নয়, বরং চীন সফর করেই তিনি এই চুক্তি চূড়ান্ত করেছেন।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, নেপাল এবং চীনের মধ্যে বিআরআই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সাত বছর আগে প্রাথমিক সমঝোতা হলেও রাজনৈতিক ঐক্যের অভাবে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। এবার উভয় দেশ প্রকল্প পরিকল্পনা, অর্থায়ন এবং সড়ক ও পরিবহন করিডর নির্মাণের মতো কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার কাঠামো চূড়ান্ত করেছে।
নেপালের এই চুক্তি নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। নেপালি কংগ্রেস ঋণনির্ভর প্রকল্পে আপত্তি জানিয়েছে। তবে চীন এরই মধ্যে নেপালের পোখারায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে ২১৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে, যা গত বছর চালু হয়। চীন এই বিমানবন্দরকে বিআরআই-এর সফলতার উদাহরণ হিসেবে দেখালেও ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়ায় বিমানবন্দরটি কার্যকরভাবে পরিচালনায় সমস্যার মুখে রয়েছে।
শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অস্বস্তি আগে থেকেই স্পষ্ট। সম্প্রতি শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব আরও সংকুচিত হয়েছে। এবার নেপালের এই পদক্ষেপ দিল্লির জন্য নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীন বিআরআই প্রকল্পের মাধ্যমে বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের কৌশল গ্রহণ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে নেপালকে অন্তর্ভুক্ত করা চীনের জন্য একটি কৌশলগত সাফল্য। অন্যদিকে, এই চুক্তি ভারতের আঞ্চলিক প্রভাবের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ক্রমশ জটিল সম্পর্কের মধ্যে চীনের সঙ্গে নেপালের এই চুক্তি ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতার আরেকটি উদাহরণ। চীনের কৌশলগত অবস্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের এই পদক্ষেপ দিল্লিকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।