অনাস্থা ভোটে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর পরাজয়, ভাঙছে সরকার
মিশেল বার্নিয়ে। ছবি: সংগৃহীত
কিছুদিন ধরেই ফ্রান্সে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছিল। চাপে ছিল মিশেল বার্নিয়ের সরকার। দেশের পরবর্তী জাতীয় বাজেট পাস করানো নিয়ে এ সংকট আরও জটিল হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিরোধী আইনপ্রণেতারা সরকারের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব তোলেন। এরপর পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অনাস্থা ভোটে হেরে গেছেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে। দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র তিন মাসের মাথায় তার ক্ষমতাচ্যুতিতে ভাঙছে ফ্রান্সের সরকার।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের পার্লামেন্টের ৫৭৭ সদস্যের মধ্যে ৩৩১ জন বার্নিয়েরের সরকারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এতে বলা হয়েছে, ১৯৬২ সাল থেকে কোন ফরাসি সরকারকে এ ধরনের ভোটের মাধ্যমে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করা হয়নি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ ক্ষমতাবলে বিতর্কিত বাজেট বিল পাস করে তোপের মুখে পড়েন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে। এমপিদের ভোট ছাড়াই বিল পাস করায় প্রধান বিরোধী দল ও বামপন্থি দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্য, ৬ হাজার কোটি ইউরো কর বাড়িয়ে এবং ব্যয় কমিয়ে ফ্রান্সের বাড়তে থাকা সরকারি ঘাটতি কমানো।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত নভেম্বরে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৬৭ শতাংশ মানুষ এই বাজেটের বিরোধিতা করেন। তবে মিশেল বার্নিয়ে বিশেষ ক্ষমতাবলে পার্লামেন্টে এমপিদের ভোট ছাড়াই পাস করিয়ে নিয়েছেন বাজেট বিল। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। দেশটির প্রধান বিরোধী দল ন্যাশনাল র্যালি, এনআর ও বামপন্থি দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আইনপ্রণেতাদের অনাস্থা ভোটে হারার পর পার্লমেন্টের স্পিকার ইয়ায়েল ব্রাউন-পিভেট বলেন, বার্নিয়েরকে এখন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে এবং পার্লামেন্ট বিলোপ্ত ঘোষণা করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত জুন ও জুলাইয়ে ফ্রান্সে আগাম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে রাজনৈতিকভাবে বড় তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে দেশটির পার্লামেন্ট। আগাম নির্বাচনের প্রায় দুই মাস পর গত ৫ সেপ্টেম্বর মিশেল বার্নিয়েকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
ডানপন্থি রিপাবলিকান (এলআর) দলের প্রবীণ সদস্য বার্নিয়ের রাজনৈতিক জীবন বেশ দীর্ঘ। ফ্রান্স ও ইইউ উভয় ক্ষেত্রেই বিভিন্ন সিনিয়র পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ৭৩ বছর বয়সি বার্নিয়ে ইইউর ব্রেক্সিট বিষয়ক প্রধান আলোচক ছিলেন। ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সরকারের সাথে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন তিনি।