জ্ঞানবাপি মসজিদ চত্বরে পূজা-অর্চনা শুরু
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসি জেলা আদালত গতকাল বুধবার নির্দেশ দিয়েছিলেন, জ্ঞানবাপি চত্বরের এক বেজমেন্টে হিন্দুদের পূজা-অর্চনা করার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার নিশ্চিত করতে সাত দিনের সময়সীমা ধার্য করা হয়েছিল। ১২ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সেই পূজা শুরু হয়ে গেল।
গতকাল বুধবার দিবাগত রাত তিনটায় মসজিদ চত্বরের সেই ভূগর্ভস্থ কক্ষে (সেলার) পূজা-অর্চনা ও আরতি করা হয়েছে বলে জেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এই পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও জ্ঞানবাপি মসজিদ বিতর্কের এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। জেলা জজ কৃষ্ণ মোহন পান্ডে ওই বেজমেন্টে পূজার অনুমতি দেন। গতকালই ছিল তাঁর কর্মজীবনের শেষ দিন।
দ্রুত পূজা-অর্চনার আয়োজন করতে গতকাল রাত ১২টায় বারানসির জেলা শাসক এস রাজালিঙ্গম ও জেলার পুলিশ কমিশনার অশোক জৈনর সঙ্গে হিন্দুরা বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত হয়। রাত তিনটায় কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের আরতির সময়েই বেজমেন্টে শুরু হয় আরতি ও পূজা-অর্চনা।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ জেলা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই রাতারাতি পূজা শুরু হয়ে যায়।
মন্দির-মসজিদের লাগোয়া কাশীর দীর্ঘদিনের বাসিন্দা সাবেক সাংবাদিক পদমপতি শর্মা আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা আদালতের এই রায়ে খুশি। তাঁরা ঠিক করেছেন, বিশ্বনাথ মন্দিরে দিনে যখন যখন পূজা হয়, ওই বেজমেন্টেও আজ থেকে সেই সময়েই পূজা ও আরতি করা হবে। মন্দির-মসজিদ চত্বরসহ গোটা শহরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
হিন্দুদের দাবি অনুযায়ী কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের মূল গর্ভগৃহ ছিল বিশাল। মোগল আমলে সেই গর্ভগৃহে প্রাচীর তুলে কয়েকটি কক্ষ তৈরি হয়। তার ওপরেই খাড়া করা হয় জ্ঞানবাপি মসজিদ। সেই কক্ষগুলোর একটি ছিল এক ‘ব্যাস’ পরিবারের। ওই কক্ষের পরিচিতিও তাঁর নামেই-‘ব্যাস জি কি তেহখানা’।
৩০ বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবের শাসনামলে ওই তেহখানায় পূজা-অর্চনা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন জেলা আদালত। মসজিদের অভ্যন্তরে হিন্দু দেবদেবীর নিত্য–আরাধনার দাবিতে মামলাকারীদের অন্যতম আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘এত দিনে এক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো।’
মসজিদ কমিটির পক্ষে আখলাখ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ওই বেজমেন্টে ‘ব্যাস’ পরিবার কোনো দিন পূজা করেনি। সেখানে কোনো মূর্তিও কোনো দিন ছিল না। বেজমেন্টটিও রয়েছে মসজিদ কর্তৃপক্ষের হাতে। যা হচ্ছে, তা অন্যায়।
আদালতের রায়ে গতকাল বলা হয়েছিল, বেজমেন্টে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি যা কিছু আছে, তা রক্ষা করতে হবে। পূজার ব্যবস্থা করতে হবে। সে জন্য সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত জেলা কর্তৃপক্ষকে করতে হবে। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ট্রাস্টবোর্ডের পুরোহিতেরা তা তদারক করতে পারবেন।
এর আগে নিম্ন আদালতের নির্দেশে মসজিদ চত্বরে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া জরিপ করেছিল। সেই জরিপের প্রতিবেদন হিন্দু ও মুসলমান দুপক্ষকেই দেওয়া হয়। তারই ভিত্তিতে মামলাকারী হিন্দু কর্তৃপক্ষ দাবি জানিয়েছিল, জরিপে দেখা গেছে, হিন্দু মন্দিরের থামের ওপর মসজিদ তৈরি হয়েছে। সেই নিদর্শন জরিপে রয়েছে। সন্ধান পাওয়া গেছে ৩৪টি শিলালিপিরও।
হিন্দুদের দাবি, মসজিদ চত্বরে পাওয়া ‘শিবলিঙ্গের’ জরিপ করা হোক।
মুসলমানদের দাবি, হিন্দুরা যাকে ‘শিবলিঙ্গ’ বলছেন, সেটা একটি ফোয়ারা। মসজিদের অজুখানা ওই চত্বরে।