পশ্চিমবঙ্গে নতুন প্রজাতির অ্যাডিনো ভাইরাস, বেড়েছে শিশুমৃত্যু
ছবি সংগৃহিত
ভারতে অ্যাডিনো ভাইরাসের নতুন একটি প্রজাতি ছড়িয়ে পড়ছে বলে দেশটির চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) জানিয়েছে। এই ভাইরাসের বিস্তারের তথ্য জানিয়ে দেশটির পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি। সেখানে বলা হয়েছে, অ্যাডিনো ভাইরাসের একটি নতুন প্রজাতি তৈরি হয়েছে। ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে যত শিশু অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তার একটি বড় অংশ ওই নতুন প্রজাতির ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
আইসিএমআর বলছে, নতুন ওই প্রজাতির ভাইরাসের মারণ ক্ষমতা অনেক বেশি। সে কারণেই এবার অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে।
অ্যাডিনো ভাইরাসের ওই নতুন প্রজাতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘‘বি৭/৩’’ হিসেবে। আর্জেন্টিনা এবং পর্তুগালে অ্যাডিনো ভাইরাসের এই প্রজাতি দেখা গেলেও ভারতে কখনও এই প্রজাতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। আইসিএমআর বলছে, পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত শিশুদের কফের পরীক্ষা করে এই প্রজাতির ভাইরাসের দেখা মিলেছে।
ভারতের এই চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা বলেছে, কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে সব মিলিয়ে তিন হাজার ১১৫ জনের কফের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তার মধ্যে এক হাজার ২৫৭ জনের শরীরে অ্যাডিনো ভাইরাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪০ জনের দেহে মিলেছে নতুন প্রজাতির ভাইরাস। যাদের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে, তাদের অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটাই সঙ্কটজনক হচ্ছে যে, তাদের ‘ভেন্টিলেশন’-এর সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হচ্ছে। বায়ুবাহিত এই ভাইরাসটি মূলত শ্বাসযন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র এবং মূত্রনালির ক্ষতি করে।
দেশটির চিকিৎসক সাত্যকি হালদার বলেন, গত বছর অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রভাব ভালোই বোঝা গেছে। বহু শিশু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অনেকের মৃত্যু হয়েছে। নতুন যে প্রজাতির কথা বলা হচ্ছে, তা অত্যন্ত মারাত্মক। ফলে এখন থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
আইসিএমআর স্বাস্থ্য দপ্তরকে যে চিঠি দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু এবং করোনার মতো রাজ্য সরকার অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কম করে দেখিয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য দপ্তর এই অভিযোগ মানতে চায়নি। তবে আগামী বছর এই ভাইরাস যে আরো জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, তা তারা মেনে নিয়েছে। এখন থেকেই এই বিষয়ে প্রস্তুতি না নিলে অবস্থা জটিল হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা।
অ্যাডিনোভাইরাসের আক্রমণ থেকে সন্তানকে সুরক্ষিত রাখবেন কী করে?
১) জনবহুল এলাকায় গেলে ভিড়ের থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখুন শিশুকে।
২) প্রয়োজন হলে আবার মাস্ক ব্যবহারে জোর দিন।
৩) খাওয়ার আগে এবং পরে ভাল করে হাত ধোয়ার অভ্যাস করান।
৪) মল-মূত্রত্যাগ করার পরে ভাল করে পরিষ্কার করছে কি না, খেয়াল রাখুন।
৫) জ্বর-সর্দি হলে অন্যদের থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করুন।
৬) আক্রান্ত শিশুদের ব্যবহারের জিনিসপত্রও আলাদা করে রাখুন।
৭) এই রোগ কিন্তু ছোঁয়াচে, তাই যত দিন না পর্যন্ত সুস্থ হচ্ছে, তত দিন বাড়ির বাইরে বেরোতে দেবেন না শিশুকে।