শিশুদের জন্য ভয়াবহতম হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন অক্টোবরের শেষের দিকেই বলেছিল, তিন সপ্তাহেই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা সাম্প্রতিককালের বৈশ্বিক সংঘাতে শিশুমৃত্যুর হারকে ছাড়িয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে ছাড়িয়েছে মোট সংখ্যাকেও।
মঙ্গলবার রাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা বলেছে, গাজায় গড়ে দিনে মারা যাচ্ছে ১৬০ শিশু।
মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজা পরিণত হয়েছে শিশুদের কবরস্থানে।
গাজায় নিরন্তর ইসরায়েলি হামলায় সাদা কাফনে মোড়ানো ছোট ছোট শরীর আর তাকে ঘিরে শোকার্ত পরিবারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যুদ্ধ এক মাস পেরোলেও গাজায় ঠিক কতজন শিশু নিহত হয়েছে সেই সংখ্যাটাও শতভাগ সম্পূর্ণ নয়। তবে এ সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গাজার সংঘাতে শিশুমৃত্যুর হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের অন্য বড় সংঘাতগুলোকে স্পষ্টতই ছাড়িয়ে গেছে।
গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত চার হাজার ১০৪ শিশু নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) জানিয়েছে। এক মাসের সহিংসতায় এই প্রাণহানি হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে শিশু নিহতের ঘটনা আরও বেশি। গাজার আয়তন মাত্র ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় ২৩ লাখ মানুষের বাস।
এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ছয় হাজার ৩০০ মানুষ বাস করে। ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, গাজার মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশই ১৮-এর নিচের শিশু-কিশোর। এ কারণেও হতাহতের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি।
ইউক্রেনে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে রাশিয়া। এক বছর আট মাসের এই সংঘাতে অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। ইউক্রেনের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনলাইন প্ল্যাটফরম চিলড্রেন অব ওয়ার ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ইউক্রেনের হতাহতদের মধ্যে ৫১০ জন শিশু। ইউক্রেনের যুদ্ধে দিনে গড়ে একটিরও কম শিশু নিহত হয়েছে।
ইয়েমেনে ২০১৫ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের লড়াই চলছে। সেখানে সাড়ে সাত বছরে তিন হাজার ৭৭৪ শিশু নিহত হয়েছে বলে ইউনিসেফ জানিয়েছে। প্রতি তিন দিনে দেশটিতে চারটি শিশু নিহত হয়েছে।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনী আফগানিস্তানে প্রবেশ করে। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এতে আট হাজার ৯৯ শিশু নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন জানিয়েছে।
সিরিয়াতে ২০১১ সালের মার্চে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ২০১১ সালের মার্চে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই বছরের মার্চ পর্যন্ত ১২ হাজার শিশু নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিনজন শিশু নিহত হয়েছে।
ইরাকে ২০০৩ সালে জর্জ ডাব্লিউ বুশের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে। ২০০৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে তিন হাজার ১১৯ শিশু নিহত হয়েছে বলে ইউনিসেফ জানিয়েছে। সূত্র : আলজাজিরা