পাকিস্তানে বিক্ষোভ-সহিংসতায় নিহত ৮, শতশত বিক্ষোভকারী আটক

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে চলছে বিক্ষোভ-সহিংসতা। এতে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন আট জন। বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ প্রায় এক হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডনের বরাতে বিবিসি বলেছে, মঙ্গলবার (৯ মে) গ্রেপ্তারের পর বুধবার (১০ মে) ইমরান খানকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে এনএবি ইমরান খানের ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে ইমরান খানের আইনজীবীরা এটার বিরোধিতা করেন।
এদিকে বুধবার পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী, আসাদ উমরকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট চত্বর থেকে এই দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ইসলামাবাদ পুলিশ জানিয়েছে, পিটিআই এর সেক্রেটারি জেনারেল আসাদ উমর ইমরান খানের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ করতে সুপ্রিম কোর্ট যাচ্ছিলেন, তখন তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগের মামলায় উমরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়ায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
পিটিআই নেতা ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর থেকে পাকিস্তানের বড় বড় শহরগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়, সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
দেশজুড়ে ইমরান খানের দলের কর্মীরা যে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তা ‘ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ।
এর আগে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েনের অনুরোধ জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি পাঠায়। এতে লাহোর, মুলতান, রাওয়ালপিন্ডি, ফয়সলাবাদ এবং অন্যান্য জেলা শহরে সেনা মোতায়েনের কথা বলা হয়।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কর্তৃপক্ষ জানান, পেশাওয়ারের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস বিক্ষোভ চলার সময় অন্তত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দাঙ্গাকারীদের ধরার চেষ্টা করছে।
পাকিস্তানে গত কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক সংকট এবং চরম উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাবেক এই ক্রিকেটার অভিযোগ করেছিলেন যে একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। পাকিস্তানের খুবই ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী অবশ্য পাল্টা জবাবে এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ৫০ বিলিয়ন রুপির বৈধতা দেওয়ার বিনিময়ে কয়েক বিলিয়ন রুপি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইমরান খান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। সেই মামলাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।
গত বছর এপ্রিলে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত হন ইমরান খান। এরপর থেকে তিনি আগাম নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।
ইমরান খানের দল অভিযোগ করছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য ইমরান খানকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে সরকার।
পাকিস্তানের সরকার অবশ্য ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পেছনে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র কথা অস্বীকার করেছে।
সরকারের আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে পাকিস্তানের ‘ন্যাশনাল একাউন্টেবিলিটি ব্যুরো, যা পাকিস্তানের দুর্নীতি বিরোধী সর্বোচ্চ সংস্থা। আদালতে বার বার তলব করার পরও ইমরান খান হাজির হতে অস্বীকার করেছেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যখনই তাকে আদালতে ডাকা হয়েছে, তিনি তার সময়মতো সেখানে গেছেন- তাও আবার চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি পাওয়ার পর।’
পাকিস্তানে সাবেক সরকার প্রধান বা রাজনীতিকদের গ্রেপ্তার করা কোনো নতুন ঘটনা নয়। তবে সেখানে সেনাবাহিনীকে এভাবে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করার ঘটনা খুবই বিরল।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত অনেক সেনা অভ্যুত্থান করেছে এবং তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তারাই দেশটি শাসন করেছে।
ইমরান খান যখন ২০১৮ সালে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসেন তখন সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার মধুর সম্পর্ক ছিল। অনেক বিশ্লেষকের ধারণা, সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়েই তিনি সেবার বিজয়ী হন। কিন্তু চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে একটা পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়। গত কয়েক মাসের ঘটনায় বোঝা যায়, তাদের সম্পর্ক এখন কতটা বৈরি হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইমরান খান হয়ে ওঠেন সেনাবাহিনীর সবচেয়ে কঠোর সমালোচক।
এদিকে পাকিস্তানের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সংযম প্রদর্শন এবং আইনের শাসন বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এরকম পরিস্থিতিতে সংযম প্রদর্শন এবং মাথা ঠাণ্ডা রাখা দরকার। পাকিস্তানের যেসব চ্যালেঞ্জ তা মোকাবিলা এবং দেশটি কোন পথে যাবে তা একমাত্র পাকিস্তানের জনগণই নির্ধারণ করতে পারে। সেটা করতে হবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এবং আইনের শাসন বজায় রেখে।’ সূত্র: বিবিসি বাংলা।
আরএ/
