ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ২, দেশজুড়ে সতর্কতা
শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) ভোর থেকে ইউক্রেনজুড়ে সতর্কতা সাইরেন বাজতে শুরু করেছে। এ ছাড়া দেশটির একাধিক শহরে হামলা করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে। এসব হামলায় ২ জনের মৃত্যু ও ৫ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার সারারাত ধরে দেশটির বেশকয়েকটি শহরে বিমান হামলা হয়েছে বলে শুক্রবার কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
নিপ্রো শহরের মেয়র বরিস ফিলাটভ জানান, এসব হামলায় শুক্রবার ভোরে এক নারী ও তিন বছর বয়সের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে তাদের বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে উমানে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া মধ্য ইউক্রেনের চেরকাসির ওব্লাস্ট আগুনের শিখা ও ধোঁয়ায় ভরে গেছে।এই শহরে ৮০ হাজার লোকের বাস করে। ফুটেজে দেখা গেছে, ভবনের একটি কোণ ধসে পড়েছে এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
চেরকাসির মেয় আইহোর তাবুরেটস জানান, ঘটনাস্থলে জরুরি সেবা বিভাগের লোকজন পৌঁছেছে এবং সেখান থেকে পাঁচজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, উমানের একটি আবাসিক ভবন ও একটি গুদামে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর প্রভাব আমাদের উপর পড়েছে এবং আকাশপথে টহল অব্যাহত রয়েছে।
এ ছাড়া মধ্য ইউক্রেনের ক্রেমেনচুক ও পোলতাভাতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলো জানায়, দক্ষিণে মাইকোলাইভের পাশাপাশি রাজধানী কিয়েভ এবং আশপাশের অঞ্চলগুলোতেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
কিয়েভের এক বাসিন্দা ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে বলেছেন, বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙেছে। মনে হচ্ছিল, ভূমিকম্প হচ্ছে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণের অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য সম্প্রতি বড় পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। ঠিক সেই সময়েই এই জোরালো অভিযান চালানো হলো।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত শহর দখলে তীব্র আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী। সেখানে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন ইউক্রেনের সেনারা।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রুশ বার্তা সংস্থা তাসের খবরে বলা হয়েছে, তাদের বাহিনী বাখমুতের উত্তর-পশ্চিম, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের চারটি ব্লক নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, দোনেৎস্কের দিকে আক্রমণকারী দলগুলো আর্টেমোভস্ক (বাখমুত) শহরের উত্তর-পশ্চিম, পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চারটি অংশ দখল করে নিয়েছে। বিমানবাহী সৈন্যরা শহরের উত্তর ও দক্ষিণ উপকণ্ঠে শত্রুদের কোণঠাসা করে ফেলেছে।
এদিকে, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো টেলিফোনে কথা বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও চীনের নেতা শি জিনপিং।
জেলেনস্কি বলেছেন, তাদের মধ্যে দীর্ঘ ও অর্থপূর্ণ আলাপ হয়েছে। অন্যদিকে জিনপিং বলেছেন, বেইজিং সবসময়ই শান্তির পক্ষে। ‘সংলাপ ও আলোচনাই’ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ।
চীনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, কিয়েভ সব যুক্তিসংগত উদ্যোগই প্রত্যাখ্যান করে আসছে এবং অবাস্তব দাবি তুলে আল্টিমেটাম দিয়ে যাচ্ছে।
জেলেনস্কির সঙ্গে শি জিনপিংয়ের ফোনালাপের পর বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, চীন ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের অংশ হিসেবে কিয়েভ ও অন্যান্য রাজধানীতে একজন বিশেষ প্রতিনিধি পাঠাবে, যার লক্ষ্য হবে রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা।
এসএন