সুদানে সেনাবাহিনী-প্যারামিলিটারি সংঘাতে নিহত ৫৬
সুদানে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। শনিবার শুরু হওয়া এই সংঘাতে দেশটির ৫০ জনের বেশি বেসামরিক লোক মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘের তিন কর্মীও রয়েছেন।
রবিবার (১৬ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রপতি ভবন, রাষ্ট্রীয় টিভি ও সেনাবাহিনী সদরদপ্তরে দুই পক্ষের লড়াইয়ের সময় বেসামরিক নাগরিকরা রাজধানী খারতুম ছেড়ে চলে যায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৭ জন বেসামারিক নাগরিকসহ মোট ২৫ মারা গেছে। এ ছাড়া এ সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৯৫ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘের তিনজন কর্মীও রয়েছেন। সামরিক বাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরা একটি সামরিক ঘাঁটিতে গুলি বিনিময়ের সময় তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। সুদানের সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে তীব্র ক্ষমতার দ্বন্দ্বই এ সংঘাতের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে সুদানের সেনাবাহিনী এবং তার বিরোধী আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) উভয়ই দাবি করেছে, তারা রাজধানী খার্তুমের বিমানবন্দর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। যদিও এসব এলাকায় রাতভর লড়াই চলেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রবিবার ভোরে খার্তুম সংলগ্ন ওমদুরমান এবং নিকটবর্তী বাহরিতে ভারী কামানের শব্দ শোনা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা পোর্ট সুদানের লোহিত সাগরের শহরটিতেও গোলাগুলির কথা জানিয়েছেন।
সেনাবাহিনী জানায়, জেটগুলি আরএসএফ ঘাঁটিতে আঘাত করছে। দেশটির বিমান বাহিনী শনিবার রাতে মানুষকে তাদের বাড়িতে থাকার আহ্বান জানান। তবে খার্তুমের বাসিন্দারা বিবিসিকে তাদের আতঙ্ক ও ভয়ের কথা জানিয়েছেন। একজন জানিয়েছেন, তাদের পাশের বাড়িতে গুলি চালানো হয়েছে।
ডাক্তারদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদেনে বলা হয়, শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই সহিংসতায় অন্তত ৫৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হয়েছেন। আরও কিছু সংখ্যক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই কমিটি জানায়, এখন পর্যন্ত ৫৯৫ জন আহত হয়েছেন। কাবকাবিয়া এলাকায় লড়াইয়ের সময় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তিনজন কর্মী মারা যান। তারা দেশের পশ্চিমাঞ্চলের বিপর্যন্ত এলাকায় খাবার বিতরণ করতেন।
এ ছাড়া এই ঘটনায় অন্য আরও দুই কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। ঘটনার সময় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির বেশ কিছু গাড়ি লুট করে আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফ।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে উত্তর আফ্রিকার দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকে সেনাবাহিনীর জেনারেলরা ‘স্বাধীন কাউন্সিল’-এর নামে দেশ পরিচালনা করছিলেন। এই স্বাধীন কাউন্সিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হলেন জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। অপরদিকে স্বাধীন কাউন্সিলের প্রধান হলেন জেনারেল আব্দেল ফাতাহ আল-বুরহান।
বেসামরিক সরকার গঠনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর এই বিষয়টি নিয়েই সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
এসএন